জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সহযোদ্ধাদের স্মরণ ও রুহের মাগফিরাত কামনা, আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় স্বাধীনতার পরবর্তী মুজিব বর্ষে এই প্রথম বারের মতো পালিত হলো পাক হানাদার মুক্ত দিবস। দিবসটি পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। পরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নীরবতা পালন, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের হল রুমে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউসিলের অতিরিক্তি দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হাশেম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের আত্মসমর্পণের প্রত্যক্ষদর্শী যোদ্ধা হিসেবে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন বরিশাল জেলা সহকারী ইউনিট কমান্ডার (প্রচার), উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ত্রাণ ও পুনর্বাসণ কমান্ডার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি, উপজেলা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত।
অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মোঃ লিটন সেরনিয়াবাত। ৭১এর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পনের স্মৃতি চারণে আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, সারাদেশ ১৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়ে বিজয় উল্লাস করলেও গৌরনদী-আগৈলঝাড়া হানাদারমুক্ত হয় এর ছয় দিন পরে ২২ ডিসেম্বর।
বর্তমান আগৈলঝাড়া থানা ছিলো তৎকালীন গৌরনদী থানার অন্তর্ভূক্ত। মুজিব বাহিনীর প্রধান আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর (এমপি) নেতৃত্বে ৮ ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত হয় বরিশাল শহর। বর্তমান গৌরনদী সরকারী কলেজে ঘাটি করা পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ না করায় মুজিব বাহিনী ও নিজাম বাহিনীর সদস্যরা ২৮ দিন যুদ্ধের পরে তাদের ঘাটি ঘিরে রেখেছিলো। ১৯ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর সাথে আত্মসমর্পণের আলোচনা হলেও ২০ ডিসেম্বর পাক বাহিনী পুণরায় গুলি চালায়।
পরে তারা মুজিব বাহিনীর দুর্ধষ যোদ্ধা রকিব সেরনিয়াবাতের মাধ্যমে সরকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনের কথা জানালে তাদের সাথে আলোচনা করার জন্য স্থানীয় ইমাম শাহজাহানকে রকিব সেরনিয়াবাত সাজিয়ে কলেজের ঘাটিতে পাঠান মুক্তিযোদ্ধারা। আলোচনা ফলপ্রসু হওয়ায় ২২ডিসেম্বর সকালে ফরিদপুর থেকে মিত্র উর্ধত অফিসাররা গৌরনদী ঘাটিতে আসলে পাক বাহিনীর ৩জন মেজরসহ তাদের অনুগত শতাধিক সেনা ও দেশীয় দোসরেরা মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত চুড়ান্ত বিজয়।
হাত উচিয়ে গুলি ফুটয়ে বিজয় উল্লাসে ফেটে পরেন মুক্তিযোদ্ধারা। হানাদার মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার আইয়ুব আলী মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক সরদার, আবু বকর সিদ্দিক, মো. ফারুক আহম্মেদ, বরিশাল জেলা পরিষদ সদস্য এ্যাডভোকেট রনজিত সমদ্দার, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক জাকির পাইকসহ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগন।