প্রতিদিন হাজারো জনতার পদচারনায় মুখরিত বরিশাল নগরীতে নেই পর্যাপ্ত কোন পাবলিক টয়লেট বা গন-শৌচাগার। কোর্ট হাসপাতাল সরকারি দপ্তর মিলে হাজারো অফিসে প্রতিদিন লাখো মানুষের আনাগোনা থাকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের মানুষ বিভিন্ন কাজে নগরীতে আসে। তবে, এতসব মানুষের প্রাকৃতিক ডাকে সারা দেবার জন্য হাতে গোনা দু-একটি গন শৌচাগার ছাড়া তেমন কোন শৌচাগার নেই এখানে। ফলে, সাধারন মানুষের বিশেষ করে অফিস চলাকালীন সময়ে নারী ও শিশুদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
অনেকেই প্রকাশ্যে রাস্তার পাশে কখনও বিভিন্ন দপ্তরে,আবার কখনও ব্যাক্তিগত বাসাবাড়িতে হানা দেয়। পুরুষেরা কোন রকমে মসজিদ বা রাস্তার পাশে কাজ সারলেও ,মহিলারা সেটি করতে পারেনা বিধায় নগরীর আবাসিক হোটেলে ছুটে যায়। এই বিড়ম্বনার কথা মুখ ফুটে কাউকে বলতেও পারেনা কেউ। নগরীতে পর্যায়ক্রমে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পেলেও সে অনুপাতে বাড়েনি শৌচাগারের সংখ্যা। কেবল টাউন হল সংলগ্ন বাইতুল মোকাররম মসজিদ,শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতাল,লঞ্চঘাট কাঁচা বাজারের মসজিদ সংলগ্ন টয়লেট ছাড়া আর কোথায়ও পাবলিক টয়লেট বা গন শৌচাগার নেই।
তবে, সেখানে প্রাকৃতিক কার্য্য সারতে হলে ১০ থেকে ১৫ টাকা গুনতে হয়। ওইসব স্থানে পরিবেশও বেশ নোংরা এবং মহিলাদের ব্যবহার অনুনোপযোগি। নগরীর বিশালতার কথা বিবেচনা করলে এখানে প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি পাবলিক টয়লেট থাকার কথা, বিষয়টি অতি সংবেদনশীল হিসাবে গন্য করেছেন চিকিৎসকরা।এ বিষয়ে কথা হয় মেডিসিনের চিকিৎসক ডাঃ রিয়াজুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষন প্রস্রাব আটকিয়ে রাখলে কিডনি বিকল হবার সম্ভাবনা থাকে, এছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে মুত্রনালীর নানা সমস্যা দেখা দেয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রুপাতলী ও নতুল্লাবাদে প্রতিদিন বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো মানূষ বরিশালে আসেন। তারা প্রথম পর্যায়েই বাস ষ্টান্ডের আশে পাশেই প্রাকৃতিক কাজ সারে। ফলে উভয় বাস ষ্টান্ডে দাড়ানো অসম্বভ হয়ে পড়েছে।
এই স্থানগুলোতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দুষিত হচ্ছে। সবার অজান্তেই ছড়াচ্ছে রোগ ব্যাধি। নগরীর বিভিন্ন সড়কের দেয়ালে লেখা থাকে ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’ নামক দেয়াল লিখন,তবে সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ করতে দেখা যায়না। অনেক সড়কের পাশেই দেখা যায় এই ধরনের অনির্ধারিত প্রস্রাব পায়খার স্তুপ যা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও পরিস্কার করতে হিমসিম খায়। নগরীর বাংলা বাজার, নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট,রুপাতলী বাসষ্টান্ড, হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা বাজার,বটতলা বাজার,সাগরদী বাজার এলাকায় এরকম উন্মুক্ত টয়লেট এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। মানুষ এখন আর বধ্য এলাকা খোজেনা, যেখানে সুযোগ পায় সেখানেই দাড়িয়ে যায়। এছাড়া নগরীর অনেক স্কুল কলেজের সীমানা প্রাচীরের পাশেই অনেকটা প্রকাশ্যেই লজ্জাহীন কাজ সেরে নেয়।
এ বিষয়ে পটুয়াখালি থেকে আগত এক ঢাকাগামি যাত্রির সাথে দেখা হয় লঞ্চঘাট বিআরটিসি কাউন্টারের মধ্যে সেখানে যাত্রিদের জন্য পাচটি টয়লেটের ব্যবস্থা রেখেছেন কর্তৃপক্ষ, তবে ওই লোক সেখানে না গিয়ে সীমনা প্রাচীরের গায়ে দাড়িয়ে প্রস্রাব করছিলেন, জানতে চাইলে বলেন, ভাই আমি বরিশালে নতুন এসেছি, কোথায় পাবলিক টয়লেট তা জানিনা তাই এখানেই কাজ সেরে নিয়েছি। এ রকম ঘটনা অহরহ চোখে পরে তবে,সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এ ব্যাপারে তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই বলেই মনে হয়। বিষয়টি নিয়ে বরিশাল সিটি কর্পেরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ডাঃ রবিউল ইসলাম বলেন,যেখানে সেখানে প্রাকৃতিক কার্য্য সম্পাদন করলে স্বাভাবিকভাবেই শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে,গন শৌচাগার বৃদ্ধি করা বা সংস্কারের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।