মনির হোসেন,মোংলাঃ
সুন্দরবনের বনজ সম্পদ ও বণ্যপ্রাণী সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি সত্বেও কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা হরিণ শিকারিদের তৎপরতা। কখনো ফাঁদ পেতে আবার কখনো গুলি করে হরিণ শিকার করে চোরা শিকারিরা। সুন্দরবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বনের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় চোরা শিকারিরা। সংঘবদ্ধ চোরা শিকারিরা বনের গহীনে অবস্থান নিয়ে নৌকা, ট্রলার ও গাছে মাচা পেতে হরিণের গতিবিধি লক্ষ্য করে। এসব স্থানে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে। পরে গোপন আস্তানায় মাংস তৈরি করে সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে। মাঝে মাঝে কোস্টগার্ড, পুলিশ ও বনবিভাগের অভিযানে হরিণ শিকারিরা ধরা পড়লেও অধিকাংশই থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে এবং ফেব্রয়ারী মাসের প্রথম দিনে সুন্দরবন থেকে শিকার করা ১৯টি হরিণের চামড়া, ৪টি মাথা, ৮৯ কেজি মাংসসহ ৭ জন চোরা শিকারিকে আটক করেছে কোস্টগার্ড ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা
মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (৩০ জানুয়ারি) গভীর রাতে মোংলা উপজেলার দিগরাজ বাজার সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি হরিণের মাথা ও ৪৭ কেজি মাংসসহ তিন চোরাকারবারিকে আটক করে কোস্টগার্ড সদস্যরা। এসময় তিনটি মোবাইল ফোন, একটি হরিণের মাথা, ভুড়িসহ ৪৭ কেজি মাংস জব্দ করে কোস্টগার্ড।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- খুলনা জেলার দাকোপ উপজলার ঢাংমারী গ্রামের আবু সরদারের ছেলে মোনা সরদার (৩২), বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার বন্নি গ্রামের জাফর শেখের ছেলে জাহিদ শেখ (৩৮) ও মোংলা উপজেলার দক্ষিণ কাইনমারী গ্রামের মোহাম্মাদ আলীর ছেলে মো.শহিদুল (৪০)।
বাগেরহাট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (১ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাতে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বগুড়া ব্রীজের কাছ থেকে ৩টি মাথা ও ৪২ কেজি হরিণের মাংসসহ বাপ-ছেলে ,দুই চোরা শিকারীকে আটক করেছে জেলা ডিবি পুলিশ। আটক দুই চোরা শিকারি হলেন- বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের জুমাতুল্লা শেখের ছেলে আব্দুর রহমান শেখ (৫২) ও আব্দুর রহমান শেখের ছেলে মোস্তাকিন শেখ (২৭)। সূত্রটি আরো জানায় শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) রাত পৌনে দুইটার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের ব্র্যাক অফিসের সামনে থেকে সুন্দরবন থেকে শিকার করে আনা হরিণের ১৯টি চামড়াসহ দুই পাচারকারীকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের মো. মতিন হাওলাদার ওরফে মতি কাজীর ছেলে মো. ইলিয়াস হাওলাদার (৩৫) ও বাগেরহাট সদর উপজেলার ভদ্রপাড়া গ্রামের মো. মোশারেফ শেখের ছেলে মো. মনিরুল ইসলাম শেখ (৪৮)। মনিরুল ইসলাম শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা। তার বাসার পাটাতন থেকে এই চামড়া উদ্ধার করে পুলিশ।
মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট এম. মাজহারুল হক জানান, সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের তৎপরতারোধে কোস্টগার্ড নিয়মিত বনের অভ্যন্তরে টহল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের ধরতে ও বনজ সম্পজ সম্পদ লুন্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে বাগেরহাট জেলার মোংলা, রামপাল ও শরণখোলা থানা পুলিশের বিশেষ টিম বনের অভ্যন্তরের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।