আগৈলঝাড়ায় গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালানোর ঘটনায় মামলা দায়ের 

নিজস্ব প্রতিবেদক
দক্ষিণ বাংলা মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দুলাভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালিয়ে শিকলে তালা দিয়ে আটকে রেখে ছবি তোলার অমানবিক ঘটনায় অবশেষে অভিযুক্ত ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহন করেছে আগৈলঝাড়া থানা।

মঙ্গলবার বিকেলে দক্ষিন বাগধা গ্রামের ভুক্তভোগী মো. এমদাদুল হক বাহাদুর বাদী হয়ে তার বাড়িতে বেড়াতে আসা শ্যালিকা পারভীন আক্তারের উপর হামলাকারী ৭জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলে রাত সাড়ে দশটায় থানায় মামলা রুজু করেন পরিদর্শক মো. গোলাম ছরোয়ার। মামলা নং-২ (৩.৮.২১)।

এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামান মঙ্গলবার রাতে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি এজাহারনামীয় আসামী ও অভিযুক্তদের বাড়ির এলাকায় নিস্ফল অভিযান চালিয়েছেন।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাগধা গ্রামের স্থানীয় মসজিদের ইমাম ইমদাদুল হক বাহাদুরের বাড়িতে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানার কাটাখালী গ্রাম থেকে তার বাড়িতে বেড়াতে আসে তার শ্যালিকা গৃহবধূ পারভীন আক্তার (২৮), সুমি আক্তার ও তাদের ছোট ভাই শাহজালাল।

ইমদাদুল হক বাহাদুরের সাথে একই বাড়ির কাশেম খানের সাথে বাড়িতে যাতায়াতের পথ নিয়ে দীর্ঘদিন চলা বিরোধের জের ধরে কাশেম খানের ছেলে ইলিয়াস খান (৪৫), তার ভাই সিরাজ খান (৪৮) ইলিয়াসের স্ত্রী রেখা বেগম (৪০), ইলিয়াসের ছেলে আহাদ খান (২০), সিরাজ খানের স্ত্রী মারুফা বেগমসহ তাদের লোকজন পারভীন ও তার সাথে থাকা অন্য দুই ভাই বোনের পথরোধ করে ওই পথ দিয়ে হেঁটে যাবার কারণে বেদম মারধর শুরু করে।
একপর্যায়ে তাঁরা পারভীনকে রশি এবং পরে লোহার শিকল দিয়ে একটি আমড়া গাছের সাথে দু’টি তালা দিয়ে আটকে রাখে। মারধরে পারভীনের শরীরের পরিধেয় বস্ত্র ছেড়া অবস্থায় মোবাইল ফোনে সেই ছবি ধারণ করে ইলিয়াসের ছেলে আহাদ। পারভীনকে মারধরের হাত থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাদের হামলার শিকার হয় তার ছোট ভাই বোনও।

শিকলে বাঁধা পারভীনের ডাক চিৎকারও প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে না আসায় স্থানীয় চৌকিদার পরেশ দাস এবং স্থানীয় আবুল কালাম সরদার, আব্দুল হক ঢালী এগিয়ে আসলে তাদের প্রতিবাদের মুখে শিকলে বাঁধা পারভীনকে মুক্ত করে ইলিয়াস। তবে আহত পারভীনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে বাঁধা দেয় হামলাকারীরা।

সোমবার দুপুরে পারভীন দুলাভাইয়ের বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদিকে হামলাকারী ইলিয়াস ও তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম নিজেদের অপরাধ ঢাকতে রোববার রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভর্তি হয়।

অন্যদিকে থানায় অভিযোগ দায়েরের পরে মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামান অভিযুক্তদের ধরতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও গ্রামের এলাকায় পুলিশ নিয়ে অভিযান চালায়। পুলিশী অভিযানের আগে থেকেই অভিযুক্ত ইলিয়াস ও তার স্ত্রী খবর পাওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পালিয়ে যায় তারা দু’জনে।

বুধবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এজাহারভুক্ত আসামী ইলিয়াস মঙ্গলবার রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নাম না কেটে গ্রেপ্তার এড়াতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কৌশলে সটকে পরে। ইলিয়াসের স্ত্রী রেখা বেগম পুলিশী অভিযানের পরে আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরে এসে বুধবার দুপুরে তাকে ভর্তি করা চিকিৎসক ডা. সৈকত জয়ধরকে তাকে (রেখাকে) বরিশাল রেফার করার অনুরোধ করলে ওই চিকিৎসক তাকে রেফার করার মতো কোন অবস্থা হয়নি জানালে হাসপাতালে ভর্তির সকল কাগজপত্রসহ লাপাত্তা হয়ে গেছে ৩৫নং বেডে ভর্তি এজাহারে অভিযুক্ত রেখা বেগম।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার দুপুরে এজাহারভুক্ত ইলিয়াস উপজেলা সদর বাজারে বসে হামলার খবর আসা পত্রিকা কিনে নিলেও মামলার তদন্তকারী অফিসার বলছেন তাকে ধরতে তিনি বাগধা গ্রামে অবস্থান করছেন।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD