“আষাঢ়ের শেষ দিন” এ কে সরকার শাওন

এ কে সরকার শাওন
দক্ষিণ বাংলা শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১
"আষাঢ়ের শেষ দিন" এ কে সরকার শাওন

বৃষ্টি আমার উদাম গায়ে
আবেগের পরশ বুলায়!
আষাঢ়ের শেষ দিনে
ফাগুন এলো তনুমনে;
সাধের কৈশোর যেন
প্রবীণের ঘাড়ে চাপড়ায়!

এতো হাঁসি! এত খুশী!
বাঁধভাঙ্গা আনন্দ উচ্ছ্বল
কবে হয়েছি তা জানা নাই!
খুশীর সনে আক্ষেপ মনে
হারানো দিনগুলি যদি
আবার ফিরে পাই!

মনের মুকুরে উঁকি মারে
এমনি আষাঢ়ের শেষ বেলায়;
সকাল থেকে ঝরছিল সেদিন
ঝুমুর বারি মুষল ধারায়!
আমরা স্কুলের আঙ্গিনায়,
নাওয়া-খাওয়া ভুলে,
মেতেছিলাম আষাঢ়ে গল্পে
ম্যারাথন আড্ডায়!

কৈশোরের সোনালী দিনগুলি
ভেসেছে কালের খেয়ায়!
কতনা আপন বন্ধু-স্বজন
খেলা করে মনের আঙ্গিনায়!

কারও কারও নামও
বেমালুম ভুলে গেছি হায়;
জানি না আজ কে কোথায়;
সবাইকে স্মরি বেদনায়!

দুপুর গড়িয়ে বিকেল,
ফুটবল হাতে নূরু ভাই হেসে শুধায়
“চলো বল খেলি এই বরষায়
লাভ নাই গাঁজাখুরি
অমন আষাঢ়ে আড্ডায়!”

বই খাতা ছুড়ে মালকোঁচা দিয়ে,
নামলাম চেক-চেইক্যা পানির মাঠে,
ছিলাম একদল হলাম দু’দল
এগারজন ছাড়া কেউ ছিলো না তল্লাটে!

আমরা পাঁচজন সবুজ দলে
বাঁকি পাঁচজন লালে,
কেউ মারে ডন কেউ হাত ছোড়ে
ওয়ার্মিং আপের কালে!

রেফারী নূর হুন্কার দিয়ে কয়,
“জয় পরাজয় বড় কথা নয়!
সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে,
ফাউল অফ সাইড না হয়!

খেলার পরে সবাই মিলবো
রেবা ময়রার দোকানে!
মণ্ডা-মিঠাই-জিলাপি-মিষ্টি
খাওয়া চলবে সমানে!

হারু টিমকে গুনতে হবে
সব খাবারের দাম,
কথা কিন্তু আগে ভাগেই
ভাই বলে দিলাম!”

বৃষ্টি মাথায় খেলা শুরু,
জলে পিচ্ছিল মাঠ,
কিকের আগেই বল দৌড়ায়!
মধ্য মাঠ থেকে কিক মারলেই
গোলকিপার পরাস্ত হায়!

ডানে লাফ মেরে বল লুফে কোলে
তারপরও বল ফসকিয়ে
জালের দেশে নিজ আঙ্গিনায়!
খুশীর ছলে পাতা পানি জলে
সবে গোল গোল বলে চিল্লায়!

খেলা তো খেলা চলছে তো চলছে
কে আছে ভুতলে মোদের থামায়!
পিচ্ছল মাঠে গোলের বন্যায়,
গোলকিপার মরে লজ্জায়।

উভয় দলের বিশ গোল
খেলায় হয়ে গেল হায় টাই!
“আর একটি গোলে খেলা শেষ;”
ঘোষণা দিল রেফারী ভাই!

দু’পক্ষ মরিয়া গোল দিতে;
দিতে হবে আরো একটি গোল!
অফসাইড বিতর্কে জড়িয়ে সবাই
বাঁধালো মহা গন্ডগোল!

এমন ঘনঘোর বরষার যখন
শেষ বিকালের আলোটুকু লুকায়;
সাক্ষী হিসাবে মানুষ তো দূর
কোন বন্য প্রাণী পাওয়া দায়!

আধাঁর নামিল ধরায়
খেলা এগিয়ে নেয়ার পথ নাই;
রেফারীও অনন্যোপায়!
ঘোষণা দিল, “খেলা ড্র ভাই,
আর কোন কথা নাই!
চলো সবে ময়রার দোকানে যাই!”

জল খাবার শেষে অবশেষে
ভেজা কাপড়ে শীতে কাচুমাচু হয়ে
নিজের বাড়ীর দিকে ধাই!
সারাদিন ছিলাম বাহিরে বাহিরে
বাড়ীর কথা একদম মনে পড়ে নাই!

মায়ের রুক্ষমুর্তি মনে ভাসলে,
ভয়ে অসাড় হইলো দেহ!
আল্লাহ ছাড়া আজ আমাকে
রক্ষা করিবে না কেহ!

পিচ্ছল পথে পা টিপে টিপে
চলেছি যেন ফাঁসীর আসামী!
জালি বেত নেড়ে নেড়ে মা শাসাচ্ছেন
আয়, কাছে আজ আজ হারামী!

নিজ বাড়ী পৌঁছামাত্র
ছোটবোন চিৎকার করে
নিঃষ্ঠুর ঘোষণা দিল;
“এসেছে রে এসেছে রে”,
মুহুর্তে দশ জোড়া চোখের তীর্যক তীর
আমার বুকে বিঁধিলো!

ঐ তো আলো আঁধারে
মাকে দেখা যায়,
মা আসছেন বেশ ধীরে!
তাঁর হাতে কোন বেত নাই
আমায় কাছে টেনে নিয়ে
আঁচল দিয়ে মাথা-মুখ মুছিয়ে
নিজেই ভাসলেন নয়নের নীরে!

চোখের জলে ভেসে মা বললেন,
” আর কত জ্বালাবি?
কবে তুই বড় হবি!
যেদিন আমি থাকবো না
ক্যামনে জীবনের পথ চলবি?”

মায়ের চোখের জল দেখে
নিশ্চুপ কেঁদেছিলাম আমি;
হারিয়ে যাইনি কোন আষাঢ়ে
কথা রেখেছি আমি!

সেদিন বাহিরে আষাঢ়ে ছিল;
ভিতরে মায়ের ভালবাসা!
আজ আষাঢ় ভিতরে বাহিরে
মুখে হাঁসি চারিপাশে বরষা!


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD