রিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্ব পর্যায়ে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। বহু বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী নিরলসভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের জন্য ন্যায্যা হিস্যা আদায়ে সোচ্চার কন্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গড়ে তুলে বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক বিষয়। তাই সারাবিশ্বকে মিলে একত্রে কাজ করতে হবে। বিশ্ব সম্প্রদায়কে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করছে না বলে উল্লেখ করে উপাচার্য তরুণদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি সমৃদ্ধ এবং উন্নয়নশীল বাংলাদেশ গঠনে স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ুবান্ধব উদ্ভাবন ও সমাধান খুঁজে বের করার জন্য গবেষণায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে সোমবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ মিলনায়তনে দি আর্থ সোসাইটির আয়োজনে ‘ রোড টু গ্লাসগো: ইয়ুথ রিফ্লেকশন অন ক্লাইমেট চেইঞ্জ এন্ড কপ২৬’ বিষয়ক এক জলবায়ু সংলাপে অংশ নিয়ে প্রধান অদিথির বক্তব্যে ববি উপাচার্য এসব কথা বলেন।
প্রতীকি যুব সংসদের চেয়ারপার্সন মো: আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বরিশাল শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. খোরশেদ আলম, সাবেক সভাপতি মো: আরিফ হোসেন, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডেপুটি রেজিস্টার বাহাউদ্দিন গোলাপ, বরিশাল বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: জালিস মাহমুদ, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়ক সোহানুর রহমান প্রমুখ। কার্বন নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর বিদ্যুতে বিশ্বের উন্নত দেশ এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ বন্ধসহ জলবায়ু দূষণ থামাতে ব্যক্তিগত কার্যক্রম গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এসময় বক্তারা উন্নত অভিযোজনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ এবং জলবায়ু সংকট জনিত ক্ষয়-ক্ষতির যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির পাশাপাশি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চাপে রাখাসহ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীসহ শতাধিক তরুণ-তরুণী এই সংলাপে অংশ নেন।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনোয়ারা বেগম। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ানক প্রভাব বিবেচনায় বিশ্ব এখন একটি সংকটময় মুহূর্তে রয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জলবয়ুর বর্তমান অবস্থাকে মানবতার জন্য লাল সংকেত বলা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি, বাস্তুচ্যুতি, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, সুপেয় পানির অপ্রতুলতা, স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করছে বাংলাদেশের জনগণ। শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক দরিদ্র দেশের জনগণ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে বাধ্য হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আইনি সমাধান বের করে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সুরক্ষা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ওপর জোর দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ২৬তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন। ২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনের পর এটি সবচেয়ে বড় জলবায়ু সম্মেলন। গত বছর হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে এক বছর পিছিয়ে এ বছর সম্মেলন হচ্ছে। এতে ২০০ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। বলা হচ্ছে, এ সম্মেলনে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেবে। এর মধ্যে বিশ্বনেতারা ছাড়াও বিজ্ঞানী, পরিবেশবাদী কর্মী, সাংবাদিক, তরুণ ও ব্যবসায়ীরাও থাকবেন। এ সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে রুল বুক প্রণয়ন, গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমণ হ্রাসে ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ডেড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি), জলবায়ু জনিত ক্ষয়-ক্ষতি বিষযক বিশেষ প্রক্রিয়া নির্ধারণ এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে (জিসিএফ) ১০০ বিলিয়ন ডলার জোগান দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।