জাকিয়ার ঈদ বানান

এস এম নাসিম
দক্ষিণ বাংলা রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০
জাকিয়ার ঈদ বানান

পারিবারিক ভাবে আমি বেশ বড় পরিবারের সদস্য। অনেক গুলো ভাই-বোন প্রায় একই সাথে বেড়ে ওঠা। পড়ালেখা আর কর্মস্থলের জন্য পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের বাড়ির বাহিরে থাকতে হতো। আমিও ২০০০ সাল থেকে বাহিরে থাকি । ঈদের সময় আমরা সব ভাই-বোন এক সাথে হওয়ার সুযোগ পেতাম।

ঈদের দিন রাতে উঠানে বড় পাটি মেলে আমরা সবাই আড্ডা দিতাম। যত কাজ থাকুক ওই দিন রাতে হতো আমাদের পরিবারের মিলন মেলা।

সে বার আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে জাকিয়ার জম্ন হলো। পরিবারে এক নতুন সদস্য যোগ হলো। ছোট এই অতিথিকে নিয়েই আমাদের আনন্দের পাল্লা ভারী হতে থাকে। তার হাসি কান্নাকে নিয়ে আমাদের সবার মধ্যে একটি আলাদা আবেদন ছিল।

দিনে দিনে বড় হতে থাকে সে, সময়ের সাথে একটু আধো আধো কথা বলতে শিখছে। বাংলা বর্ণগুলো খুব সুন্দর ভাবে চেনে। ছোট ছোট বানানও বলতে পারে। যা দেখে তাই বানান করে পড়ার চেষ্টা করে। আমরা কৌতুহলি হয়ে তার এই বানান শুনতাম। ভুল-শুদ্ধ যাই হোক তার তারিফের শেষ ছিল না।

তেমনি এক ঈদুল ফিতরের রাতে সবাই বসেছে উঠানে। যোগ দিয়েছেন শিশু অতিথি। ঈদের রাত তাই ঈদ নিয়েই কথা। তাকে বলা হলো বানান করতো মা-মনি ঈদ। সে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে বানানটি একটু কঠিন তার কাছে । হঠাৎ বলে উঠল, ‘য়ীদ’ । সবার মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল। শিশুটিও হাসল, তার সামনের দাঁতগুলো পোকায় খাওয়ার কারণে কালে বর্ণ ছিল। শিশুর ফোকলা দাঁতের হাসি আর আমাদের আনন্দের সাথে হারিকেনের আলোর ঝলকানিতে এক আলো আঁধারির চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন।

সেই শিশুটি আজ অনেক বড় হয়ে গেছে । দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রীও অর্জন করেছেন। সরকারি চাকরিও করেন। কিন্তু তার সেই ঈদ বানান আমাদের স্মৃতি থেকে একটুও বিলীন হয়নি।

জাকিয়া সেদিন ভুল সঠিক যাই বলুক, আমাদের আনন্দ দিয়েছিল, এই ভেবে সে বানানটি ঈদ বা য়ীদ যাই হোক সে চেষ্টা করেছে। সম্প্রতি, বাংলা একাডেমী ঈদ বানানটি পরিবর্তন করেছে। তারা ঈদ এর পরিবর্তে ইদ লিখতে বলছে, গরুর বদলে গোরু।

কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কোরবানির ‘ইদে গোরু’ কিনতে বলা হচ্ছে। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, আরবি শব্দ হওয়ায় ঈদ না হয়ে ইদ হবে। আর গরু না হয়ে গোরু হবে। কারণ গো-মাতা, গো-মূত্র, গো-রক্ষা, গো-পূজা যেহেতু ব্যাপকভাবে প্রচলিত, কাজেই গোরুই যুক্তিসঙ্গত।

আবার, অনেকই বলছেন-“গো দি‌য়েই য‌দি গরু বুঝায় তাহলো রু ব্যবহার (যোগ করা) বাহুল্য দোষ”।

এদেশের মানুষ বিভিন্ন বানান দ্বিধা-হীনভাবে মেনে নিলেও ঈদের বেলায় সেটা মানতে পারছে না। কারণ ঈদ শব্দটি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির সাথে যুক্ত। তাদের যুক্তি হচ্ছে ঈদ ঈদই, ইদ নয়। আইন+ইয়া+দাল=ঈদ।

আবার, পানি শব্দটি বিদেশি শব্দ, এটি এসেছে ফারসি থেকে। এদেশের মানুষ জলাশয় ব্যবহার করে, জল-বসন্তে ভোগে, জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়, জলপ্রপাত দেখতে যায় কিন্তু পান করতে চাই পানি। আবার কারো কারো পান্তাভাতে সমস্যা না থাকলেও পানিতে ব্যাপক সমস্যা। তারা জলই পান করে।

তাই, ঈদ বানান নিয়ে এতো ঠেলাঠেলির মাঝে আমার সেই ছোট ভাইজির ফোকলা দাঁতের মিষ্টি হাসি দিয়ে অবলীলায় বলা ‘য়ীদ’ বানানই আমার কাছে সঠিক মনে হয়।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD