জীবনের সফলতায় মুহাম্মাদ (সা.)-এর ১১ উপদেশ ও দোয়া

ডেস্ক রিপোর্ট
দক্ষিণ বাংলা রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১
জীবনের সফলতায় মুহাম্মাদ (সা.)-এর ১১ উপদেশ ও দোয়া

পরিশুদ্ধ, স্বচ্ছ ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। এতে নেই বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি। যার প্রতিটি দিকই ভারসাম্যপূর্ণ। তাই সুন্দর ও উত্তম জীবন গঠনে ইসলামি জীবনাদর্শ গ্রহণের বিকল্প নেই। কারণ ইসলামের সুমহান দিকনির্দেশনায় আলোকিত জীবন ও সমাজ গড়ে সফল হয়েছেন অজ্ঞতার যুগের সাধারণ মানুষ।

অজ্ঞতার যুগে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে শুনিয়েছেন কুরআনের বাণী। জীবনের চাওয়া-পওয়ার কথা বুঝিয়েছেন নিজ ভাষায়। একটাই ছিল উদ্দেশ্য- মানুষ যেন দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায় থেকে মুক্ত থেকে নৈতিক ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হয়। সব সময় সব কাজে অন্তরে আল্লাহর ভয় পোষণ করে। পরিশুদ্ধ জীবন পেয়ে ধন্য হয়।

প্রিয়নবির গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ

যে উপদেশে আলোকিত জীবন ফিরে পায় অজ্ঞতার যুগের মানুষ। তা থেকে কিছু তুলে ধরা হলো-

১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মাঝে বিভেদ না করে ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’

এ ঘোষণাটি মহান আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবিকে জানিয়েছেন এভাবে-

‘হে মানুষ! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি; পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে; যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাবান; যে সর্বাধিক আল্লাহকে ভয় করে। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব খবর রাখেন। (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)

২. কুলুষমুক্ত চরিত্রের ব্যক্তিকে প্রিয় নবি ঈমানদার হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন- ‘কোনো মানুষ যদি পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে চায়, তবে সে যেন উত্তম চরিত্র অর্জন করে।’ এ হাদিসে চরিত্রকে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে তুলে ধরেছেন।

৩. প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিশুদ্ধ জীবনের জন্য মানুষকে নির্লোভী হতে উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি সম্মানিত হতে পারবে ওই ব্যক্তি, যে মানুষের কাছে কোনো কিছু হাত পেতে চায় না।’

৪. পরিশুদ্ধ ও গোনাহমুক্ত জীবনের জন্য বিশ্বনবি সব সময় আল্লাহ তাআলার জিকিরের উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত ওই ব্যক্তি, যে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করে।’ আল্লাহ তাআলা নিজেও মানুষকে বেশি বেশি জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর; এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর। তিনিই তোমাদের প্রতি রহম করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখানোর জন্য রহমতের দোয়া করে। তিনি মুমিনদের প্রতি দয়ালু।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৪১-৪৩)

৫. পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ জীবন পেতে আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতার বিকল্প নেই। সে কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সব সময় ওজুর সঙ্গে থাকে, আল্লাহ তাআলা তার রিজিকের প্রশস্ততা বৃদ্ধি করে দেন।’

৬. হারাম থেকে বেঁচে থাকাই ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির সব দোয়া (চাওয়া-পাওয়া) আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, যে ব্যক্তি সব সময় হারাম থেকে বেঁচে থাকে।’

৭. মুমিন মুসলমানের মুক্তি ও কল্যাণে প্রিয় নবি মানুষের ব্যক্তি জীবনের উপদেশও তুলে ধরেছেন এভাবে- ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে গোনাহমুক্তভাবে উপস্থিত হওয়ার (গুরুত্বপূর্ণ) আমল হলো, স্ত্রী সহবাসের পর দ্রুত পবিত্র হয়ে যাওয়া।’

৮. মানুষকে নিরাপদ রাখতে এবং জুলুমমুক্ত জীবনের প্রতি উৎসাহিত করতে অনেক বড় সুসংবাদ দিয়েছে বিশ্বনবি। তিনি বলেন- ‘পরকালে ওই ব্যক্তি আল্লাহর নূরসহ ওঠবে; যে ব্যক্তির দ্বারা কখনও মানুষ অত্যাচিরত হবে না।’ সুতরাং কোনোভাবে কারো প্রতি জুলুম বা অত্যাচার করা যাবে না।

৯. প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে আল্লাহমুখী জীবন গড়ার উপদেশ দিয়েছেন এভাবে- ‘ওই ব্যক্তি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হবে; যে আল্লাহর ফরজ বিধান পালনে গুরুত্বের সঙ্গে যত্নবান হয়।’

১০. সবরের প্রতি উৎসাহিত করতে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন- ‘দুনিয়ার বিপদাপদে যে ব্যক্তি সবর বা ধৈর্য ধারণ করবে, ওই ব্যক্তির দ্বারা জাহান্নামের আগুণ নেভানো সম্ভব হবে।’

১১. বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে তিনটি উপায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে উন্নত জীবনের পথে পরিচালিত করার কথা বলেছেন-

> গরিব-অসহায়কে অতি গোপনে সাদকা তথা দান-সহযোগিতা করবে।

> আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।

> কখনো কোনোভাবেই কারো (মানুষের) ওপর রাগ বা অভিমান করা যাবে না। সর্বাবস্থায় রাগ বর্জন করা।

বেশি বেশি দোয়া করা

কেননা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কয়টি দোয়া বেশি বেশি পড়েছেন। তন্মধ্যে এটিও একটি। এ দোয়ায় রয়েছে সব চাওয়া-পাওয়া। তাহলো-

اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আ’ফাফা; ওয়াল গেনা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি। (মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের সফলতায় প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্লেখিত হাদিসগুলোর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। প্রিয় নবির শেখানো দোয়ায় আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ পেতে ধরণা দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD