নেত্রকোনায় সূর্যমুখী ফুলের আবাদকে ঘিরে জমে উঠেছে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে জেলার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা গ্রামে আড়াই একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এ বছর চাষ করা হয় সূর্যমুখীর।
গাছে ফুল আসতে শুরু করায় তা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের লোকজন। প্রতিদিন নতুন নতুন আগন্তুকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বারহাট্টা উপজেলার সিংধা গ্রামের চাষী সবুজ মিয়া।
সবুজ মিয়া স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মুর্শেদ কাঞ্চনের আড়াই একর জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন সূর্যমুখীর। শুরুতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেয়ায় ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। কয়েকগুণ লাভের আশা করছেন তিনি।
তবে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে আসা লোকজন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। শুধু স্থানীয় নয়; বাগানটিকে এক নজর দেখার জন্য বা একটি সেলফি তোলার জন্য প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন উৎসুক লোকজন।
এমনকি বাইরের জেলা থেকেও সূর্যমুখীর বাগান দেখতে অনেকেই আসছেন ঘুরতে। ইতোমধ্যে নেত্রকোনার ভ্রমণপিপাসু মানুষের পছন্দের স্থানে পরিণত হয়েছে এই সূর্যমুখী বাগানটি। মনোমুগ্ধকর এ পরিবেশে একটু সময় কাটানোর জন্য আর হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুলের হাসির ঝিলিক দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক জনতা এসে ভিড় করছেন।
উপজেলা কৃষি অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, এ বছর কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনার আওতায় উপজেলার মোট ১৫০ জন কৃষককে ১ কেজি করে সূর্যমুখীর বীজ দেয়া হয়েছে; যার বর্তমান বাজারমূল্য কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা।
এর মধ্যে বিশজন চাষী প্রায় আঠারো বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। এছাড়াও সব কৃষককে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা এবং সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা এতই বেশি যে, তাদের অবাধ বিচরণে হুমকিতে পড়েছে বাগানটি। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে আমদের। প্রতিদিন ছেলে-মেয়েসহ নানা বয়সের লোকজন আসেন। অনেকেই ছবি তোলার জন্য ঢুকে পড়েন বাগানের ভেতর। অবাধ চলাফেরায় নষ্ট হচ্ছে গাছ ও ফুল। কেউ কেউ জোর করে ছিঁড়ে নিচ্ছেন ফুল, আবার কেউ নিতে চান আস্ত গাছ।
সূর্যমুখী ফুল বাগানের দেখতে আসা দর্শনার্থী সোহেল রেজা বলেন, আসলে একসঙ্গে এতগুলো সূর্যমুখী ফুল আগে কখনো দেখা হয়নি। তাছাড়া নেত্রকোনায় সূর্যমুখীর বাগান আগে কখনও আমি দেখিনি তাই এখানে ছুটে আসা। আমি বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে এসেছি। একসঙ্গে এতফুল দেখে আমি অভিভূত।
শিক্ষার্থী কামরুল হাসান, তানিয়া আক্তার ও সাবিনা বেগম বলেন, আমরা ময়মনসিংহে থাকি। কিছুদিন ধরে ফেসবুকে ছবি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিই সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসব। তাই বাগানটি নিজের চোখে দেখতে আসা। দেখে আমরা অনেক ছবি তুলেছি। খুব ভালো লেগেছে আজকের দিনটি।
বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কৃষক মজনু মিয়া বলেন, লোকজনের চাপ এত বেশি যে এখন বাগানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা কয়েকজন সারাদিন এখানেই পড়ে থাকি। কারণ দর্শনার্থীরা অনেক সময় ভেতরে ঢুকে গাছ এবং ফুল দুটোই নষ্ট করে। এত মানুষ সামাল দেয়া আমার জন্য অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে।