পহেলা মার্চ ১৯৭১: ধনঞ্জয় দে

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১
পহেলা মার্চ ১৯৭১: ধনঞ্জয় দে

আজ থেকে শুরু হল স্বাধীনতা অর্জনের মাস । যাকে আমরা অগ্নিঝরা মার্চ নামে অভিহিত করি ।সে এক দিন এসেছিল বাঙালীদের জাতীয় জীবনে । সেসব স্মৃতিময় দিনগুলোকে মনে করলে যদি কোন বাঙ্গালীর গায়ে কাঁটা না দেয় তবে সে বাঙ্গালী নয় । ১৯৭১ সালের এই মাসেই সমগ্র বিশ্বের সামনে বাঙ্গালীরা দেখিয়েছিল তেইশ বছরের পাকিস্তানী শোষন বঞ্চনার শিকল ছিড়ে কিভাবে সংগ্রাম করে স্বাধীকার আদায় করতে হয় ।

স্বাধীনতা অর্জনের আকাঙ্খায় সমগ্র জাতি যেন এক মন এক প্রাণ হয়ে বীরবিক্রমে রণাঙ্গনে ঝাপিয়ে পড়েছিল ।এই মার্চ মাস শুরু হলেই পুরো জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করে সেইসব বীর সন্তানদের যারা স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন ।জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরন করে বাংলার অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা,বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার আবির্ভাব না হলে বাঙ্গালীরা হয়তো কোনদিন মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ পেত না ।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করার পরেও বাঙ্গালীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে পাকিস্তানী শাসকের টালবাহানা শুরু করে । ভিতরে শুরু করে গনহত্যার ষড়যন্ত্র। এর ফলে বাঙালীরা বুঝতে পারে যে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে ।

এদিন রেডিওতে সকাল থেকেই ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ভাষন দেবেন । দুপুরে তার ভাষন রেডিওতে প্রচার করা হয় । তিনি সার্বিক পরিস্থিতির কিছু ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে রাজনীতিবিদদের উপর দোষ চাপান । সর্বোপরি ৩ মার্চের আহুত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষনা করলেন ।এই ঘোষনা শোনার পর পুরো জাতি যেন স্ফুলিঙ্গের মত ফুঁসে উঠল ।বুঝতে বাকি রইল না যে পশ্চিমারা বাঙালীদের হাতে ক্ষমতা দিতে চায় না ।

ক্ষুব্ধ মানুষেরা বিক্ষোভ শুরু করে দেয় । এদিন ঢাকা স্টেডিয়ামে পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল । ইয়াহিয়ার এই আশাহত করা ঘোষনার ফলে দর্শকেরা খেলা বন্ধ করে দিয়ে সেখানেই বিক্ষোভ শুরু করে ।পাকিস্তানি পতাকা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয় ।ততক্ষনে হাজারো মানুষ জড়ো হয় পল্টন গুলিস্তানে ।সবার মুখে একই স্লোগান “বীর বাঙ্গালি অস্ত্র ধরো বাংলা দেশ স্বাধীন কর”।সবাই মিছিল করে যায় মতিঝিল অভিমুখে। কারন তখন হোটেল পুর্বাণীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সংসদীয় দলের সাথে বৈঠক করছিলেন ।

বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনগন বঙ্গবন্ধুর কাছে নতুন কর্মসূচী ঘোষনার দাবী জানান ।বৈঠক শেষ করে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের সাথে মিলিত হন ।ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন তেইশ বছর ধরে বাঙালীদের কে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে ।অধিবেশন স্থগিত করাকে তিনি ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন । তিনি আরো বলেন অধিবেশন স্থগিত করার বিষয়ে তার সাথে কোন পরামর্শ করা হয় নি ।এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে তিনি সামরিক জান্তার প্রতি কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন ।

এরপর তিনি অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষনা করেন এবং এর অংশ হিসেবে দুই মার্চ ঢাকায় ও তিন মার্চ সারা পুর্ব পাকিস্তানে হরতাল এর ডাক দেন ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এদিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় । এদিন থেকেই সারা দেশের বিভিন্ন ব্যানার পোস্টার থেকে পাকিস্তান শব্দটি মুছে ফেলা শুরু হয় । এভাবেই শুরু হয় উত্তাল মার্চ মাস । তেইশ বছরের পাকিস্তানী অত্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে জাতি সোচ্চার হয়ে ওঠার চুড়ান্ত রূপ ধারন করে এই মার্চ মাসে ।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD