পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, ৬৪৩ দিন পর অপসারণ

নিউজ ডেস্ক
দক্ষিণ বাংলা শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১
পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, ৬৪৩ দিন পর অপসারণ

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর এক তরুণীর পেটের মধ্যে কাঁচি রেখেই সেলাই করে দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটে ২০২০ সালের ৩ মার্চ। ঘটনার ৬৪৩ দিন পর শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে ওই হাসপাতালেই পুণরায় অস্ত্রোপচার করে তরুণীর পেট থেকে ছয় ইঞ্চি লম্বা কাঁচিটি বের করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক তরুণীর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে বলেন, ৭২ ঘণ্টার আগে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এ দিকে, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ওই হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, এ ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি করা হবে। কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ভুক্তভোগী ওই তরুণীর নাম মনিরা খাতুন (১৮)। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের বাসিন্দা খাইরুল মিয়ার মেয়ে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মনিরা তৃতীয়।

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০ সালের ৩ মার্চ ওই মেডিকেলের সার্জারি বিভাগ ইউনিট ২ এর সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিনের অধীনে ভর্তি ও অস্ত্রোপচার করা হয় ওই তরুণীর। মনিরা মেজিনট্রিক ফিস্ট (রক্তের দলা) জনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই সময় তার পেটের মধ্যে চিকিৎসকদের অজ্ঞাতসারে অস্ত্রোপচারের কাজে ব্যবহৃত ছয় ইঞ্চি লম্বা অর্টারি ফরসেপ রেখে সেলাই করা হয়।

মনিরার ভাই মো. কাইয়ুম বলেন, অস্ত্রোপচারের আগে ৮দিন ও পরে ৯দিন মনিরা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অস্ত্রোপচারের কয়েকদিন পরেই মনিরাকে নগরকান্দার পৈলানপট্টি গ্রামে বিবাহ দেওয়া হয়। বিয়ের পরও তার পেটে ব্যথা ছিল। পরে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। মনিরার পেটের বাচ্চা নষ্ট হলে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী। পরে বিভিন্ন গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু পেট ব্যথা কমেনি। ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে প্রায় দু’বছর চেপে রাখেন পেট ব্যথা। গত চারদিন আগে পেটে অসহনীয় ব্যথা উঠলে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) মুকসুদপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। ওই ক্লিনিকে এক্সেরের পরে চিকিৎসক দেখতে পান, মনিরার পেটের মধ্যে একটি কাঁচি রয়েছে।

পরে শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) মনিরাকে ফরিদপুর নিয়ে আসা হয়। এখানে এসে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আবার এক্সরে করা হলে একই প্রতিবেদন আসে।শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনিরার অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে অংশ নেন সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক রতন কুমার সাহা, সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিন ও রেজিস্ট্রার সালেহ মো. সৌরভ। তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে মনিরার পেট থেকে দুপুর দেড়টার দিকে কাঁচিটি বের করা হয়।

আজকের অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া চিকিৎসক অধ্যাপক রতন কুমার সাহা বলেন, তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। মনিরার জ্ঞান ফিরেছে। দীর্ঘদিন কাঁচিটি পেটের মধ্যে থাকায় পেটের নাড়ি পেঁচিয়ে যায় এবং একটি নাড়িতে পচন দেখা যায়। রোগী নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। ৭২ ঘণ্টা না গেলে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় তারা আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় যোগাযোগ করেছেন গতকাল (শুক্রবার) রাতে। কোতোয়ালি থানার ওসি বলেন, আগে অস্ত্রোপচার করে কাঁচি বের করাসহ রোগী সুস্থতা নিয়ে ফিরে আসুক, পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD