প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, সংযোগ সড়ক বাঁধলেন এলাকাবাসী

ডেস্ক রিপোর্ট
দক্ষিণ বাংলা সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ

রংপুরের মিঠাপুকুরের হাছিয়া নামাপাড়া গ্রামের রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ সড়কের নির্মাণ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন আশপাশের ছয় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো সুফল না পাওয়ায় স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সহায়তায় রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেন এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের হাছিয়া নামাপাড়া গ্রামের কাঠগড়ি নদীর উপর দিয়ে রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ সংস্কার করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় হতে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর প্রথম কিস্তি ও চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় কিস্তির এক লাখ ৩০ হাজার টাকা চেয়ারম্যান উত্তোলন করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও রাস্তাটি সংস্কার করেননি তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সংস্কারের জন্য চেয়ারম্যান ময়নুল হক রাস্তার পাশে গাছগুলো কেটে নিতে বলেন। আমরা প্রায় একমাস আগে গাছগুলো কেটে নিই। কিন্তু চেয়ারম্যান রাস্তা সংস্কার না করে টালবাহানা শুরু করেন।’

নজরুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, ‘চেয়ারম্যান রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ সড়কটি ঠিক না করায় আমরা সবাই মিলে কাজটি করেছি। এখন শুনছি, চেয়ারম্যান ওই রাস্তাটি নির্মাণের জন্য আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ করেননি তিনি।’

স্থানীয় লাভলু মিয়া ও শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যদি সরকারি বরাদ্দ হয়ে থাকে, তাহলে কাজটি করতে চেয়ারম্যান টালবাহানা করছেন কেন, বুঝতে পারছি না। মূলত কাজটি না করে সরকারি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন তিনি।’

স্থানীয় নয়া মিয়া বলেন, ‘আমাদের একমাত্র চলাচলের ভাঙা রাস্তাটি ঠিক করার জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বরের অনেকবার গিয়েছি। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাইনি। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ী জুয়েল ভাই রাস্তাটি ঠিক করার জন্য আমাদের আর্থিক সহায়তা করেছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের হাছিয়া, হেলেঞ্চা, উচা বালুয়া, সন্তোষপুর, সোনারপাড়া, আকন্দপাড়া ও নামাপাড়া গ্রামের প্রায় চার হাজার মানুষের চলাচল এই রাস্তা দিয়ে। পাঁচবছর আগে কাঠগড়ি নদীর ব্রিজের উপর নির্মিত হয় একটি ব্রিজ। হঠাৎ বন্যায় রাস্তাটিসহ ভেঙে যায় ব্রিজের দু’পাশের সংযোগ রাস্তা।

স্থানীয় শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় গ্রামের প্রায় চার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। বন্যার কারণে ভেঙে যাওয়ার ফলে রাস্তাটি দিয়ে চলাচল দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। চরম দুর্ভোগে পড়েছিলাম আমরা। জুয়েল ভাইয়ের অর্থায়নে রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ সড়কটি ঠিক করেছি।’

ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া বলেন, ‘গ্রামবাসী রাস্তাটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে কষ্টে ছিলেন। বিষয়টি জানার পর স্থানীয়দের সাথে নিয়ে রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ সড়কটি ঠিক করে দেই। তিনি আরও বলেন, এলাকার লোকজনের সাথে নিয়ে দায়বদ্ধতা থেকেই আমি কাজটি করেছি। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।’

বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ সড়কটি নির্মাণ শ্রমিক দিয়ে হবে না, ভেকু (স্কেবেটর) দ্বারা করতে হবে। ভেকু না পাওয়ায় কাজটি করতে দেরি হয়।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোশফিকুর রহমান বলেন, ‘ওই রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে, প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির এক লাখ ৩০ হাজার টাকা চেয়ারম্যান উত্তোলন করেছেন। টাকা উত্তোলনের পরেও সংস্কার কাজটি না করার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন পিআইও মোশফিকুর রহমান।’


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD