প্রাইভেট প্র্যাকটিস সরকারি হাসপাতালে বৈষম্য বাড়বে: ডা. লেলিন

দক্ষিণ বাংলা
দক্ষিণ বাংলা বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ডা. লেলিন

সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা কর্মঘণ্টার পর হাসপাতালের চেম্বারেই ব্যক্তিগতভাবে রোগী দেখতে পারবেন। এই কার্যক্রমকে বলা হচ্ছে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস।

আগামী ১ মার্চ থেকে শুরু হবে এই কার্যক্রম। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এদিকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কর্মস্থলে রাখা এবং রোগীদের স্বল্পমূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবার পাওয়ার উদ্দেশ্যে করা ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ বিষয়ে জানতে চাইলে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলানিউজেকে বলেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জনগণের টাকায় বেতন পান। তাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে কাজের সময় সঠিকভাবে রোগী দেখা। যদি তাদের কর্ম ঘণ্টার পর সরকারি হাসপাতালে টাকা নিয়ে রোগী দেখা হয় কিংবা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা হয়, তাহলে হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে যাবেন তাদের মধ্যে স্পষ্টত দুটি শ্রেণি তৈরি করা হবে। সকালে রোগীরা কোনো ফি না দিয়েই চিকিৎসক দেখাবেন এবং বিকেল টাকা দিয়ে দেখাবেন। অর্থাৎ সকালটা হবে বিত্তহীন ও নিম্নবিত্তদের এবং বিকেল বেলা হবে বিত্তবান ও অর্থশালীদের। আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার মানেরও একটি পার্থক্য গড়ে উঠবে। যা স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য তৈরি করবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশে বর্তমান স্বাস্থ্যসেবার যে অবস্থা তাতে খুব ভালো হয়, প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে সকাল এবং বিকেল দুই সিফটের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে বিকেলে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। কোনো চিকিৎসক যদি সকালের শিফটের পর বিকেলে কাজ করতে চান তাহলে তাকে বিকেলের শিফটের বেতন দেওয়া যেতে পারে। তবে সরকারি হাসপাতালে সেবা সরকারি অর্থেই হওয়া উচিত। সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস হওয়া উচিত নয়। বিকেলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস হলে সকালের রোগীদের অনেকেই সকালের সেবায় অসন্তুষ্ট হয়ে বিকেল বেলা টাকা দিয়ে সেবা নিতে চাইবেন। অর্থাৎ সরকারি হাসপাতালগুলো প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অন্যতম একটি জায়গা হয়ে উঠবে। যেটা আসলে বাঞ্ছনীয় নয়।

এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি অর্থে কিছু মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা দরকার। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশের অতি দারিদ্র্য জনগোষ্ঠী, আরেকটি হচ্ছে প্রতি বছর বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় ৬২ থেকে ৬৫ লাখ মানুষ যারা দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে, তাদেরকে সরকারি অর্থে এবং ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া প্রয়োজন। এরপর মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের ভর্তুকি মূল্যে চিকিৎসা দেয়া উচিত। বিত্তবান শ্রেণির যেহেতু অনেক অর্থ রয়েছে তাই তারা বেসরকারি খাত থেকে চিকিৎসা নিতে পারবে। যদি এরকম একটি ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে আমরা দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারব না।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে দেশের সব মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। তারা সেই দায়িত্ব নিজে পালন করবে না বেসরকারি খাত দিয়ে করাবে, না উভয় ক্ষেত্রের যৌথ সমন্বয়ে করবে, সেটি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি দেশের সরকারি খাত কত শতাংশ মানুষের চিকিৎসা দেবে এবং বেসরকারি খাত কত শতাংশ মানুষের চিকিৎসা দেবে সেটিও নির্ধারণ করা উচিত। এটা নির্ধারণ করার পর সেই অনুযায়ী জনবল, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সামগ্রী এবং ওষুধপত্র ইত্যাদিরও ব্যবস্থা করা দরকার। সরকারি হাসপাতালে যিনি চিকিৎসা নেবেন, তিনি যেন শুধু চিকিৎসকের পরামর্শই নয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধপত্র যেন সে সরকারি খাত থেকেই পায়। তা না হলে কিন্তু সরকারি হাসপাতালকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের জায়গায় পরিণত করা কোনো শুভ ব্যাপার হবে না।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকের রোগী দেখাই শুধু স্বাস্থ্য সেবা নয়, এটা একটা অংশ মাত্র। যদি সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে এটা অর্থবহ হবে না। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যায় স্বাস্থ্য সেবায় রোগীর চিকিৎসকের জন্য ব্যয় হয়, মাত্র ১১ শতাংশ, ওষুধপত্র,পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অন্যান্য বিষয়ে বাকি খরচ হয়। এরা ১১ শতাংশ নিয়ে চিন্তিত, বাকি যে ৮৯% সে বিষয়ে চিন্তিত নয়।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD