প্রেমের ফাঁদে পড়ে যুবকের সর্বনাশ, দিতে হলো জীবন

ডেস্ক রিপোর্ট
দক্ষিণ বাংলা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১
প্রেমের ফাঁদে পড়ে যুবকের সর্বনাশ, দিতে হলো জীবন

সুনামগঞ্জে এক তরুণীর ‘প্রেমের ফাঁদে’ পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন জুবায়ের আহমদ জনি (২২) নামে এক যুবক। শেষপর্যন্ত ওই যুবক ‘আত্মহত্যা’ করতে বাধ্য হন। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে ব্যবসায়ী ছয়ফুল্লা আদালতে এ অভিযোগ করেন। পরে আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ মামলা নেয়।

এর আগে গত ৯ জুন রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মামলার আসামি ওই তরুণীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলা অবস্থায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জুবায়ের। এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করা হয়েছে।

জুবায়ের বাবা ছয়ফুল্লা এই প্রতিবেদককে জানান, প্রায় আড়াই মাস আগে শহরের আফতাব নগরের বাসিন্দা এক তরুণীর সঙ্গে একদিনই দেখা হয় তার ছেলের। এরপর দুয়েক দিন ফোনে কথা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে জুবায়েরকে কিছু কথা আছে বলে বাসায় ডেকে নেন তরুণী। ওই বাড়িতে গেলে আগে থেকে ফাঁদ পেতে রাখা গোয়াল ঘরে জুবায়েরকে নিয়ে প্রবেশ করেন তরুণী। গোয়াল ঘরে ঢুকতেই তরুণীর বন্ধু ফরহাদসহ অন্যরা বাইরের দিকে তালা লাগিয়ে দেন। এরপর তারা জুবায়েরকে নির্যাতন করে। পরদিন ২৬ মার্চ থানায় ধর্ষণ মামলা (নম্বর ২৯) দায়ের করেন তরুণী। এই মামলায় জুবায়েরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তরুণীর বন্ধুরা জুবায়েরের বাবাকে জানান, ১০ লাখ টাকা দিলে তরুণী আপোষ করবে এবং তার একমাত্র সন্তান জুবায়ের মুক্তি পাবে।

জুবায়ের বাবা বলেন, সন্তানকে মামলা থেকে রেহাই দিতে স্থানীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে ওই মেয়েকে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা নগদ তুলে দেন। স্থানীয় কাউন্সিলরসহ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতে টাকা দিয়ে আপোষ করার পর ২৭ দিন পর জুবায়ের জেল থেকে বের হন। এ ঘটনায় জুবায়ের অপমানিত বোধ করেন। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু ওই তরুণী তার পিছু ছাড়েনি। নানা ফোন থেকে তাকে হুমকি-ধমকি এবং বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। মেয়েটির চাপে ভীত থাকতো জুবায়ের।

ছয়ফুল্লা জানান, বুধবার রাতে তিনি এবং তার ছেলে একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে নিজ নিজ কক্ষে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটে স্ত্রী আজিজুন নেছার মোবাইলে ফোন দেন ওই ওই তরুণী। বলেন, জুবায়েরের কক্ষে তাড়াতাড়ি যেতে। আমার স্ত্রী ওই কক্ষে গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতে পান ছেলে ফ্যানে ঝুলছে।

জুবায়ের বাবার দাবি, ওই সময় তার ছেলের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার অন করা ছিল এবং ভিডিও কলে তার মৃত্যু দেখিয়েছে তরুণীকে।

তিনি বলেন, আমি এই ঘটনার বিবরণ ও টাকা লেনদেনের ভিডিওসহ, ছেলের মোবাইল ফোনের সিম এবং আমার স্ত্রীর ফোনের সিম আদালতের কাছে উপস্থাপন করে প্রতিকার চেয়ে সোমবার দরখাস্ত করি। আদালত দরখাস্ত গ্রহণ করে সুনামগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে মামলা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন।

জুবায়েরের মা আজিজুন নেছা বলেন, ফজরের নামাজ পড়তে ঘুম থেকে ওঠা মাত্র আমার মোবাইলে একটি মেয়ের ফোন আসে, সে বলে আমার ছেলে মারা গেছে। তাড়াতাড়ি রুমে যেতে। রুমে গিয়ে দেখি আমার ছেলে সত্যি সত্যি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। এরপর আমি চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

স্থানীয় কাউন্সিলর পেয়ারা বেগম বলেন, মেয়েটি দরিদ্র হওয়ায় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু পরে আমার সন্দেহ হয়। ধর্ষণ মামলা করে টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেবার পর আমার খারাপ লেগেছে। ছেলেটি মারা যাবার কয়েকদিন আগে আমার কাছে এসে বলেছিল, মেয়েটি তাকে নানাভাবে বিরক্ত করছে, ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আমি বিষয়টি দেখব বলে তাকে আশ্বাস দিয়েছিলাম।

অভিযুক্ত তরুণীসহ ছয়ফুল্লার মামলার দায়ের করা আসামিরা হলেন- তরুণীর বাবা হিরণ মিয়া, আসামী নাছির মিয়া, শহীদ মিয়া, লুৎফুর মিয়া, আতাউর মিয়া, ফজরুননেছা ও নাঈম মেহেদী ফাহাদ।

অভিযুক্ত তরুণী এবং তার বাবা হিরণ মিয়ার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহিদুর রহমান বলেন, আসামিদের গ্রেফতার করতে মঙ্গলবার রাত থেকেই অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদেরকে গ্রেফতার করতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD