মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সম্মলনে হবে রক্তপাতের শংকা !

ডেক্স রিপোর্ট
দক্ষিণ বাংলা বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১

বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভায় নির্বাচনী কমিটি গঠন নিয়ে ব্যাপক হট্রগোলের খবর পাওয়া গেছে। এমনকি কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের মারধর করতেও তেড়ে গেছেন সভাপতি পদপ্রার্থী তমাল মালাকার নামে এক ব্যক্তি। তিনি সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম ভাঙিয়ে গঠনতন্ত্র বাদ দিয়ে কমিটি ঘোষনার দাবী জানান দিলে ঐ হট্রগোল বাঁধে।

মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল নগরীর আর্যলক্ষ্মী ভবনে সভাকক্ষে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ঐ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান কমিটির এটিই ছিলো শেষ সভা।

সংগঠনের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র দে নারু’র সভাপতিত্বে সভায় শুরুতে সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিৎ দত্ত লিটু বার্ষিক আয় ব্যয়ের হিসাব পেশ করেন। হিসাব পেশ শেষে এক পর্যায়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে নির্বাচনী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় কার্যনির্বাহী পরিষদ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহসভাপতি বৃন্দ. যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ, সাংগঠনিক ও অর্থ সম্পাদকসহ আরো বেশ কিছু পদধারী নেতারা নির্বাচনী পরিষদের সদস্য হওয়া কথা। গঠনতন্ত্রের এই নিয়ামাবলি ঘোষনা দেবার সময় তমাল মালাকার নামের ঐ ব্যক্তি প্রথমে হট্টগোল শুরু করেন।

সভায় উপস্থিতিরা জানায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়ার সাথে সাথেই মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদে সভাপতি পদ প্রত্যাশী ও বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার এবং মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গায়েত্রী সরকার পাখি চড়াও হয়ে ওঠেন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের উপর। সভায় তমাল ও গায়েত্রী দাবী করেন, “গঠনতন্ত্র দিয়ে সব কিছু হয় না। পূজা পরিষদের কমিটি গঠনে গঠনতন্ত্রের এখন আর দরকার পরবে না। মেয়র মহোদয় (সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ) যে সভায় থাকেন, সেখানে তার সম্মতিই সব। সংগঠনের গঠনতন্ত্র লাগে না। কোন ভাবেই নির্বাচনী/সাবজেক্ট কমিটি গঠন করে পূজা পরিষদের কমিটি করতে দেয়া হবে না বলে তাদের দাবী।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, তমাল ও গায়েত্রীর দাবী ছিলো, সম্মেলনের দিন যাদের পক্ষে বেশি লোক দাঁড়িয়ে হাত জাগাবেন তারাই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। তবে এই দাবী অযৌক্তিক জানিয়ে সভার অন্য সদস্যরা প্রতিবাদ করেন। এসময় বিশ্বজিৎ ঘোষ বিশু বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠন করতে হবে। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিশুকে মারতে তেড়ে যান তমাল মালাকার। তবে সিনিয়র সদস্যরা দুজনের মাঝে দাড়িয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। তমাল ও পাখির দাবী অযৌক্ত জানিয়ে প্রতিবাদ করেন এ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র দাস, নিতাই সাহা, শোভন দাসসহ আরো অনেকে।

সভায় তমাল ও গায়েত্রী দাবী করেন, মেয়র তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী কমিটি গঠন করতে হবে। পাল্টা জবাবে বিশ্বজিৎ ঘোষ বিশু বলেন- তার সাথেও মেয়রের কথা হয়েছে। মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি করতে। তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে। এরপরেই তমাল মালাকার ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্বজিৎ ঘোষ বিশুকে ঘুষি মারতে উদ্যত হন এবং দেখে নেবার হুমকি ধামকি দেন।

এই ঘটনায় বরিশাল মহানগর ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে গোটা হিন্দু ধর্মালম্বীদের মাঝে। অনেক নেতারাই জানান, পূজা পরিষদের কমিটি গঠনে কখনই রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ হয়নি। এবারও কেউ হস্তক্ষেপ করছে না। সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ সব সময়ই গণতন্ত্রের পক্ষে । সনাতন ধর্মালম্বীদের সুখে দুখে সিটি মেয়র পাশে থাকেন। অথচ মেয়র সাদিকের নামি ভাঙিয়ে একটি চক্র মেয়রকে বিব্রত করতে বিভিন্ন সংগঠনে এমন বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে।

পূজা পরিষদের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড সুভাষ চন্দ্র দাস নিতাই জানান, ধর্মীয় সংগঠন একটা অনুভুতির জায়গা । এটি কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। চর দখল করার মতও নয় এসব সামাজিক ধর্মীয় সংগঠনগুলো। নেতৃত্ব পেতে কেউ যদি অগঠনতান্ত্রিক অযৌক্তিক কিছু করে সেটা মেনা যায় না।

এই বিষয়ে জানতে বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক সুরঞ্জিৎ দত্ত লিটু হট্টগোলের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, একটি বড় সংগঠনে এমন ছোটখাটো ঘটনা ঘটে। তাছাড়া যা কিছু হয়েছে তা সিনিয়ররা সমাধান করেছেন।

পূজা পরিষদের মহানগরের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র দে নারু জানান, সব সংগঠনেই একটা গঠনতন্ত্র থাকে, পূজা পরিষদেও আছে। সভার সিদ্ধান্ত এবং গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ীই তার পরিষদ নতুন কমিটি উপহার দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।

ঘটনার বিষয়ে তমাল মালাকার দাবী করেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটানো হচ্ছে। তিনি কোথাও মেয়রের নাম ভাঙান না। তমালকে বরিশালের মানুষ এমনিতেই চেনে। মেয়রের নাম ভাঙানোর প্রশ্নই ওঠে না বলে তার দাবী।

সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গায়েত্রী সরকার পাখিকে বুধবার দুপরে দাবী করেন, অভিযোগটা সম্পূর্ন মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমরা চাই এটা মেয়র মহোদয় দেখবে। তার হস্তক্ষেপেই মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটি হবে।

সম্মেলনে রক্তপাতের আশঙ্কাঃ-
চর দখল স্টাইলে এর আগে বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে তমাল মালাকারের বিরুদ্ধে। সেখানেও হাত “জাগিয়ে নেতা নির্বাচন” পদ্ধতি চালু করেন। সেই একই কৌশল এখন চাচ্ছেন মহানগর পূজা কমিটি গঠন করতে। এজন্য, পূজা পরিষদের সাথে সম্পৃত্ত নেই হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে এমন মানুষ ভাড়া করার পায়তারা চলছে বলে জানা গেছে। আগামী শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জগদীশ স্বারস্বত বালিকা বিদ্যালয় মাঠে সম্মেলন হবার কথা রয়েছে। তাতে রক্তপাতের আশাঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা।

প্রসঙ্গত: স্বঘোষিত নিজেকে সিটি মেয়রের লোক পরিচয় দেয়া তমাল মালাকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ ছিলো। করোনা আতংকে এক নরসুন্দরের মরদেহ বরিশাল মহাশ্মশানে ঢুকতেই দেয়নি। ঘন্টার পর ঘন্টা মরদেহ শ্মশানের গেটে বৃষ্টিতে ভিজেছিলো। এনিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।। বৃষ্টির মধ্যেও লাশ নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পরার পর তৎকালীন বরিশালেরও জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি হস্তক্ষেপ করে মরদেহ শ্মশানে সৎকারের ব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়াও রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে মহাশ্মশানে সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে তমাল। সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম ভাঙিয়ে মহাশ্মশানের মধ্যে নানা অপকর্ম করে আসছে তমাল মালাকার ও তার সহযোগিরা। সমাধি সংস্কার থেকে শুরু করে নানা অযুহাতে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের অভিযোগ এই তমালের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মহাশ্মশানের মধ্যে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ১৯৯৬ সালে বরিশালের এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সহযোগি হিসেবে পরিচিত ছিলেন এই তমাল মালাকার। দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে সম্প্রতি বরিশালে এসে আবারো অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সম্পর্কে পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা জ্ঞাত থাকলেও তারা ভয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD