মৃত্যুর পাঁচ দশক পরও অনন্য মধুবালা

ডেস্ক রিপোর্ট
দক্ষিণ বাংলা বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
মৃত্যুর পাঁচ দশক পরও অনন্য মধুবালা

বলিউডে আপনার প্রিয় অভিনেত্রী কে? আজকের দিনে যদি কাউকে এমন প্রশ্ন করা হয় তাহলে বেশিরভাগ মানুষই দীপিকা পাড়ুকোন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, কঙ্গনা রানাওয়াত, ক্যাটরিনা কাইফ, কারিনা কাপুর, আলিয়া ভাট, ইয়ামি গৌতম, আনুশকা শর্মা কিংবা সোনাক্ষী সিনহার মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবেন।

অভিনয়ের দিক থেকে বিবেচনা করলে আজকের দিনে বলিউডের মধ্য থেকে যদি কাউকে বেছে নিতে বলা হয় তবে সবার ওপরে কঙ্গনা রানাওয়াত কিংবা দীপিকা পাডুকোনের মধ্য থেকে একজনকে বেশিরভাগ মানুষ এগিয়ে রাখবেন।

উদীয়মান অভিনেত্রীদের মধ্যে সারা আলী খান এখন বলতে গেলে সবার শীর্ষে। আজ থেকে বিশ বছর আগে যদি কাউকে এ প্রশ্ন করা হত তাহলে মাধুরী দীক্ষীত, মনীষা কৈরালা, সোনালি বিন্দ্রে, ঐশ্বরিয়া রায়, সুস্মিতা সেন, রানী মুখার্জী, কাজল মুখার্জী কিংবা প্রীতি জিনতার মধ্য থেকে হয়তোবা একজনের নাম আসত।

সত্তরের দশক থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে হেমা মালিনী, রেখা কিংবা শ্রীদেবীর মতো নায়িকারা গোটা বোম্বেতে রাজত্ব। ভারতীয় চলচ্চিত্র কোনোদিন কোনো ধরনের তারকার অভাব দেখিনি, তবুও এই একজনের শূন্যতা আজও গোটা ভারতবর্ষের মানুষকে কাঁদায়।

তিনি আর কেউই নন, পর্দায় তাকে মধুবালা হিসেবে সবাই চিনতেন। তার আসল নাম মুমতাজ জাহান বেগম দেহলভী। ১৯৩৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে এক পাঠান পরিবারে তার জন্ম হয়। পৈতৃক নিবাস পাকিস্তানের পেশোয়ারে। যদিও জীবিকার সূত্রে তার পরিবার দিল্লিতে বসবাস করতেন।

সেখান থেকে তারা পরবর্তীতে বোম্বে চলে আসেন। তার বাবা ইম্পেরিয়াল টোবাকো কোম্পানিতে কাজ করতেন, এগারো ভাই-বোনের মধ্যে মধুবালার অবস্থান পঞ্চম।

আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে তার শৈশব অতিবাহিত হয়। শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় জগতে তার পদার্পণ। ১৯৪৯ সালে অশোক কুমারের বিপরীতে ‘মহল’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন। এরপর আর কোনো দিন তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

একে একে ‘হাসতে আনসো’, ‘তারানা’, ‘সাঙ্গদিল’, ‘বহুত দিন হুয়ে’, ‘হাওড়া ব্রিজ’, ‘বারসাত কী রাত’ এর মতো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শক হৃদয়ে তিনি স্থান করে নেন। তবে তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নামটি সম্ভবত ‘মুঘল এ আজম।’

মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আনাররকলি নামক এক নর্তকীর প্রেম কাহিনির ওপর ভিত্তি করে এ চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়, যেখানে সম্রাট জাহাঙ্গীরের (সিনেমায় তাকে যুবরাজ সেলিম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে) চরিত্রে অভিনয় করেন কিংবদন্তি নায়ক দিলীপ কুমার এবং আনারকলি চরিত্রে আবির্ভূত হন মধুবালা।

ভারতের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা এবং ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘মুঘল এ আজম’ এর নাম প্রথম দিকে উচ্চারিত হয়। এ সিনেমার একটি গান ছিল ‘পেয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া’ যা আজও গোটা উপমহাদেশে সবচেয়ে জনপ্ৰিয় রোমান্টিক গানগুলোর মধ্যে একটি।

মুঘল এ আজম সিনেমাটি দর্শকদের হৃদয়ে এতটা আলোড়ন সৃষ্টি করে যে বাস্তব জগতেও অনেকে দিলীপ কুমারের বিপরীতে মধুবালাকে যুগল হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেন। যদিও তাদের মধ্যকারে প্রেম ভালোবাসা পরিণয়ে রূপ নিতে পারেনি। তার বাবা ছিলেন রক্ষণশীল মুসলিম, তাই এত সাফল্যের পরেও অভিনয় জগতে মেয়ের পদচারণাকে তিনি ভালোভাবে নেননি।

১৯৬০ সালে কিশোর কুমারের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। যদিও তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। কিশোর কুমারের পরিবার ছিল ব্রাহ্মণ, তাই তারা এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। কথিত আছে, মধুবালা প্রায় সময়ে কিশোর কুমারের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হতেন।

১৯৫৪ সালে বহুত দিন হুয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় তার হার্টে একটি ছিদ্র ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে তার এ সমস্যা আরও প্রকট হতে থাকে। চিকিৎসক তাকে জানান, তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং ধীরে ধীরে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।

১৯৬৯ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৭ বছর বয়সে সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। বোম্বের সান্তা ক্রুজের এক মুসলিম গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

তার চলে যাওয়ার পর প্রায় ৫০ বছর অতিক্রান্ত হতে চলল, তবুও এ ৫০ বছরে তার জনপ্রিয়তার ভাটা পড়েনি এক বিন্দুও। গ্ল্যামার কিংবা অভিনয় দক্ষতা যে দিক থেকে বিবেচনা করা হোক না কেনও সবদিক থেকে তিনি অনন্য। এমনকি নাচেও ছিলেন পারদর্শী।

তার মৃত্যু ভারতীয় উপমহাদেশকে ছাপিয়ে গোটা পৃথিবীর মানুষকে এতটাই কাঁদিয়েছিল যে আমেরিকার বিভিন্ন পত্রিকাগুলোতে সে সময় প্রধান শিরোনাম হিসেবে তার মৃত্যুর সংবাদ ছাপা হয়েছিল। ওয়াশিংটন পোস্ট তাকে নিয়ে মন্তব্য করেছিল।

‘জনপ্রিয় অভিনেত্রী মধুবালা আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী অথচ তার পদচারণা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরের কোনো দেশে।’

নিউইয়র্ক টাইমস তার সম্পর্কে লিখেছিল, ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে মেরিলিন মনরো যদি হন মধ্যগগণের সূর্য; তাহলে মধুবালা হচ্ছেন সে গগণের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। গোটা পৃথিবীতে তাই এক মেরিলিন মনরো ছাড়া অন্য কোনো অভিনেত্রী তার মতো এত জনপ্রিয় নন।’


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD