লকডাউনের প্রভাবে লোকসানে রেডিমেট খাট ব্যবসায়ীরা

রিয়াজ মাহমুদ, পটুয়াখালী প্রতিনিধি
দক্ষিণ বাংলা বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১
লকডাউনের প্রভাবে লোকসানে রেডিমেট খাট ব্যবসায়ীরা

‘লকডাউন পরার পর কোন কাষ্টমারও নাই, বেচা-কেনা নাই। আমরা অলস সময় কাটাইতেছি। আরোও কয়ডা দিন থাইকবার চাইছিলাম কিন্তু লোকসান হওয়ায় গাড়ী ভাড়া কইরা এখন মালামাল নিয়া ফিইররা যাইমু।’ কথাগুলো বললেন রুবেল আকন্দ নামে এক রেডিমেট খাট বিক্রেতার কর্মচারী। ওই কর্মচারীর মালিকের নাম মামুন মন্ডল।

গত ২৩ মার্চ (১০ চৈত্র) মেলা উপলক্ষে খাট বিক্রি করতে আসেন পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলতলা নামক এলাকায়। বাড়ী বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার লস্করপুর গ্রামে। শুধু তিনি নন একই এলাকা থেকে ব্যবসার উদ্দ্যেশ্যে আসেন মিল্লাত, জাহাঙ্গীর, আমিনুল ইসলাম ও পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠী উপজেলার রিপন নামে আরো কয়েক ব্যবসায়ী। কিন্তু করোনার সংক্রামন বেড়ে যাওয়ায় সরকার লকডাউন ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েন তাঁরা।

সরেজমিনে ফুলতলা গিয়ে খাট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর ১০ চৈত্র পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভার ফুলতলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্ব কল্যান গীতা আশ্রম এর আয়োজনে ৫ দিন ব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই মেলায় বগুড়ার শিবপুর ও পিরোজপুরের স্বরুপকাঠী থেকে রেডিমেট খাট ব্যবসায়ীরা খাট বিক্রি করার জন্য আসেন। মেলা শেষ হলেও খাট বিক্রি করার জন্য থাকেন ২-৩ মাস পর্যন্ত। ওই সব খাটের ক্রয়মূল্য স্থানীয় ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এসে ভিড় জমায়। কিন্তু করোনার প্রভাবে গত বছর ওই মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় খাট বিক্রেতারা আর আসেননি।

এবছর খাট ব্যবসায়ীরা আসলেও চিত্রটা ছিল অন্যান্য বছরের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। মেলা উপলক্ষে খাট বিক্রি করার জন্য ২৩ মার্চের আগেই ফুলতলা এসে পৌছান ওই সকল ব্যবসায়ীরা। প্রথম দিকে ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে যাচাই-বাচাই করে দেখেন বলে বেচা-বিক্রি একটু কম হয়। যে সময়ে ক্রেতাদের সমাগম বাড়বে ঠিক সেই সময় করোনার সংক্রামন বেড়ে যায়। এ কারণে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে লকডাইন ঘোষণা করায় ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে ওই সব ব্যবসায়ী ও তাঁদের কর্মচারীদের বসেবসে খাওয়া ছাড়া আর কোন কাজ নেই।

খাট ক্রেতা উপজেলার কালাইয়া গ্রামের রুবিনা বেগম (৩৫) বলেন, আমার পাশের বাসার এক লোক একটি খাট ক্রয় করেন। খাটটি দেখতে খুব সুন্দর। দামেও ছিল কম। তাই তাঁর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে এখানে (ফুলতলা) খাট কিনতে আসি। দরদামে মিলে যাওয়ায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে আমি একটি খাট ক্রয় করি।

বগুড়া থেকে আসা খাট ব্যবসায়ী মিল্লাত শেখ জানান, মেলা উপলক্ষে আট লক্ষ টাকার বিভিন্ন ডিজাইনের রোলার,বক্স,সেমিবক্স) খাট বিক্রয়ের জন্য এখানে(ফুলতলা) আসেন তিনি। লকডাইনের কারনে কোন ক্রেতা আসছে না। ফলে কোন বেচা-বিক্রি নেই। তাই প্রায় ১ মাস হয়ে গেলও মাত্র ৬৫ হাজার টাকার খাট বিক্রি করেছেন তিনি। অথচ এক মাসে তাঁর ৩ জন কর্মচারীর বেতন ও খাওয়ার খরচ মেটাতে ও পরিবহন খরচসহ তাঁর প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যায় হয়েছে। তাঁর মত এখানকার সকল ব্যবসায়ীদের একই আবস্থা। আরেক ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের কর্মচারী নুরুন্নবীসহ আরো অনেকেই জানান, করোনার কারনে লকডাইন ঘোষণা করায় লোকজন বাহিরে বের হতে পারছে না। ফলে ক্রেতা শুন্য হয়ে পড়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁদের।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD