শেবাচিম হাসপাতালের বর্জ্য থেকে প্লাস্টিক ও কাগজের সামগ্রী যাচ্ছে ভাঙ্গারীর দোকানে

নিজস্ব প্রতিবেদক
দক্ষিণ বাংলা বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১
শেবাচিম হাসপাতালের বর্জ্য থেকে প্লাস্টিক ও কাগজের সামগ্রী যাচ্ছে ভাঙ্গারীর দোকানে

বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বর্জ্য নিয়ে যখন বিপাকে পরেছেন কর্তৃপক্ষ, তখন সেই বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করেই কাগজ ও প্লাষ্টিকের ব্যবহৃত বহু মালামাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভাঙ্গারির দোকানে। আর ভাঙ্গারির দোকান থেকে সেসব মালামাল হাতবদল হয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গার নিয়ে যাচ্ছেন এর ক্রেতারা।

হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে,এই মহামারি করোনাকালে গড়ে সবথেকে বেশি চিকিৎসা বর্জ্য সামগ্রী বের হচ্ছে হাসপাতালের করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দবৃত করোনা ওয়ার্ড ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে।

আর জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ ওয়ার্ডের বর্জ্যগুলো অপসারণ করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তাই এ ওয়ার্ডসহ গোটা হাসপাতালের বর্জ্যগুলো হাসপাতাল ক্যাম্পাসের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় মাটি খুরে ফেলা হয়ে থাকে। যে গর্তগুলো ভরে গেলে তা মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে দেয়া হয়।

তবে সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, করোনা ওয়ার্ডের বর্জ্যগুলো সংশ্লিষ্ট ভবনের সামনের অংশেই মাটি খুরে করা গর্তে ও তার আশপাশে ফেলা হচ্ছে। যেখান থেকে প্লাষ্টিকের ওয়ান টাইম বাটি, গ্লাস, স্যালাইনের ব্যাগ, সিরিঞ্চ, পানির বোতল, ওষুধের খালি (প্লাস্টিক ও কাগজের) প্যাকেটসহ ব্যবহৃত নানান চিকিৎসা বর্জ্য সামগ্রী বস্তায় ভরে ভ্যানে বা রিক্সায় চেপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এছাড়া মূল হাসপাতাল ভবনের বর্জ্যগুলো স্টাফ ক্যান্টিনের পেছনে ফেলা হচ্ছে, যেখান থেকেও একইভাবে ব্যবহৃত চিকিৎসা বর্জ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।যেকাজ বহু আগে থেকেই চলে আসছে ।

হাসপাতালের পূরাতন স্টাফরা বলছেন, ভাঙ্গারি পন্য হিসেবে ক্ষ্যাত এসব কাগজ ও প্লাস্টিকের ব্যবহৃত মালামাল বহু আগে থেকেই হাসপাতাল ক্যাম্পাস থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে কিছু লোক। তবে করোনাকালে সবথেকে বেশি স্যালাইনের ব্যাগ, সিরিঞ্চ, ‍ওষুধের খোসাসহ একবার ব্যবহৃত সামগ্রী বর্জ্য হিসেবে হাসপাতাল থেকে ফেলা হচ্ছে। আবার এরমধ্যে বেশিরভাগটাই করোনা ওয়ার্ড থেকে বের হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, কখনো দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে, আবার কখনো সন্ধ্যা বেলা এখান থেকে প্লাস্টিকের এসব মেডিকেল সামগ্রী সংগ্রহের কাজটি কিছু লোক কোন ধরনের নিরাপত্তাসামগ্রীর ব্যবহার ছাড়াই খালি হাতেই করছেন। ময়লার স্তুপের নীচ থেকে তার প্রয়োজনীয় জিনিসটি বের করে আনতে লাঠির ব্যবহারও কেউ করছেন। এরপর তা প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ভ্যান ও রিক্সায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সংগ্রহকারীদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, এগুলো এখান থেকে সংগ্রহ করে ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করেন তারা। আর সেই বিক্রিত টাকা দিয়েই চলে তাদের সংসার। আর ভাঙ্গানির দোকানের কর্মচারীরা জানান, এসব জিনিসের ক্রেতা বরিশালের থেকে ঢাকাতেই বেশি রয়েছে।

তবে করোনা ওয়ার্ডে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও কাগজের সামগ্রীগুলো এভাবে সংগ্রহ করে নগরের বিভিন্ন ভাঙ্গারীর দোকানে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা যে কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ সেই সম্পর্কে তারা অবগতই নন।

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাঃ সৌরভ সুতার জানান, সাধারণত হাসপাতালের বর্জ্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আর তা যদি হয় সংক্রমিত ব্যধি করোনায় আক্রান্ত রোগীর, সেগুলো তো আরো মারত্মক ক্ষতিকর হবে এটাই স্বাভাবিক। এসব বর্জ্যের ক্ষেত্রে পুড়িয়ে ফেলা নয়তো মাটিচাপা দেয়াই উত্তম। নয়তো যে কেউ সংক্রমিত হতে পারে।

সদ্য যোগদানকৃত হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, যতটুকু জানতে পেরেছি বর্জ্যগুলো আগে সিটি করপোরেশন নিয়ে যেতো। তবে তারা নেয়া বন্ধ করে দিলে মাটি খুঁড়ে এই বর্জ্যগুলো চাপা দেয়া হচ্ছে।

কাগজে কলমে হাজার শয্যার এ হাসপাতালটিতে দ্বিগুন রোগী থাকছে বলে জানিয়ে তিনি আরো জানান, জনবল সংকটের কারনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজটিসহ বর্জ্য অপসারনে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এতিকে সম্প্রতি বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে জানান, বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন দ্রুত হাসপাতাল থেকে ময়লা-আবর্জনা নেয়ার কাজটি শুরু করবেন।

উল্লেখ্য চিকিৎসা-বর্জ্য ( ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ এ- চিকিৎসা-বর্জ্যকে ১১ টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যারমধ্যে সংক্রামক/ জীবাণুযুক্ত শ্রেণীর বর্জ্যকে প্রথমত প্রাঙ্গন/নিরাপদ স্থানে কংক্রিটের পিট পদ্ধতিতে শোধন/বিনষ্টকরণ করতে বলা হয়েছে।আর পরিমাণে অল্প হলে গভীর মাটি চাপা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাষ্প অটোক্লেভিং/মাইক্রোওয়েভ ট্রিটমেন্ট/ ইনসাইনেরেটর এর ব্যবহার করতেও বলা হয়েছে।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD