সুদের টাকা পরিশোধে ২২ দিনের সন্তান বিক্রি

ডেস্ক রিপোর্ট
দক্ষিণ বাংলা বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১
সুদের টাকা পরিশোধে ২২ দিনের সন্তান বিক্রি

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের কয়েন গ্রামে সুদ ব্যবসায়ীর টাকা পরিশোধের চাপে বাধ্য হয়ে ২২ দিন বয়সী সন্তান বিক্রি করেছেন ভ্যানচালক বাবা রেজাউল করিম। এক লাখ ১০ হাজার টাকায় শিশুটিকে বিক্রি করা হয়।

এ ঘটনায় শিশুটির বাবা রেজাউল করিম, সুদ ব্যবসায়ী একই গ্রামের দুর্লভ প্রামাণিকের ছেলে আব্দুস সামাদ ও সানোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
সোমবার (১লা মার্চ) রাতে কয়েন গ্রামে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা মঙ্গলবার রাতে প্রকাশ হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, কয়েক মাস আগে রেজাউল প্রতিবেশী সুদ ব্যবসায়ী কালাম হোসেন এবং আব্দুস সামাদের কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ নেন। এর মধ্যে কিছু সুদ পরিশোধ করলেও চক্রবৃদ্ধি হারে তা বেড়ে ৮০ হাজারে দাঁড়ায়। এসব টাকা পরিশোধের জন্য মহাজনরা উপর্যুপরি চাপ দিয়ে আসছিল তাকে।

এমনকি তার আয়ের একমাত্র উৎস ভ্যানটিও কয়েকদিন আগে কালাম হোসেন জোর করে নিয়ে নেন। তারপরও টাকা পরিশোধের জন্য মহাজনরা চাপ দিলে এক পর্যায়ে রেজাউল তার ২২ দিন বয়সের শিশুকন্যাকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু স্ত্রী ফুলজান বেগম তাতে বাধা দেয়ায় রেজাউল ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের পায়ে কোপ দেন এবং নিজেকে শেষ করে দেয়ার হুমকি দেন। এতে বাধ্য হয়ে তার স্ত্রী শিশুটিকে দিয়ে দিলে সুদ ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদের আত্মীয় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সরাইকান্দি কারিগরপাড়ার মৃত মোবাশ্বের হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলামের কাছে এক লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। পরে তারা দুজন তাদের পাওনা টাকা ভাগাভাগি করে নেয়াসহ অবশিষ্ট টাকায় রেজাউলের জন্য একটি ভ্যান কিনে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী জানান, সুদের টাকার জন্য কয়েকদিন যাবতই মহাজনরা রেজাউলের বাড়িতে এসে হৈচৈ করছিল। তাই শিশু সন্তানকে বিক্রি করে তাদের টাকা দিয়েছে বলে শুনেছি।

কয়েন বাজারের ভ্যান বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার রেজাউলকে সঙ্গে করে আব্দুস সামাদ আমার কাছে এসে একটি ভ্যান কেনার জন্য ২৮ হাজার টাকা দিয়েছেন। রেজাউলের মেয়ে বিক্রির টাকা থেকে এ টাকা দিয়েছে বলে শুনেছি।

এ ব্যাপারে রেজাউল করিমের কান্নারত স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে রেজাউল করিম তার শিশু সন্তানকে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও টাকা নেননি বলে দাবি করেন। নগর ইউপি চেয়ারম্যান নীলুফার ইয়াসমিন ডালু বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। তবে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বলেছেন, তিনি ক্রয় নয় শিশুটিকে দত্তক নিয়েছেন।

এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ওসি আনোয়রুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি আমরা। কয়েকজনকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে তার শিশুসন্তানকে অন্যের কাছে দত্তক রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তবে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য তিনি শিশুসন্তানকে টাকার বিনিময়ে দত্তক দিয়েছেন কি না তা জানা যায়নি।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD