“স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন”: ধনঞ্জয় দে

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০২১
“স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন”: ধনঞ্জয় দে

আজ উত্তাল মার্চের দ্বিতীয় দিন । এইদিন সারা ঢাকা শহরে হরতাল পালন করা হয়। জনগন স্বতস্ফুর্ত ভাবে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেয় । আজকের দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি বিশেষ দিন । কারন এইদিন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয় । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে ঐতিহাসিক বটতলায় আয়োজিত এক ছাত্রসমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব সবুজের মধ্যে লাল বৃত্ত ও সোনালী রঙয়ের বাংলার মানচিত্র সংবলিত বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন ।

এই ঘটনা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির একটি টার্নিং পয়েন্ট । পতাকাটি তৈরি করেছিলেন শিব নারায়ন দাস । উপস্থিত ছাত্রজনতা তুমুল হর্ষধ্বনি এবং স্লোগানের মাধ্যমে নতুন পতাকা কে সম্মান প্রদর্শন করে । ছাত্রসমাবেশ একটি জনসভায় পরিনত হয় এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় জাগ্রত হওয়া মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয় ।

ছাত্রজনতা আস্তে আস্তে অনুধাবন করতে শুরু করতে থাকে যে স্বাধীনতা ছাড়া তাদের হাতে আর কোন পথ নেই । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এইদিন সাংবাদিকদের কাছে বলেন “নির্বাচনে জয়ী প্রতিনিধিরাই এখন ক্ষমতার বৈধ দাবীদার । সুতরাং আর এক মুহুর্ত পর্যন্ত সামরিক শাসন কার্যকর থাকার কোন যুক্তি নেই”। এই অবস্থায় তিনি সকল বাঙ্গালী সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনুরোধ করেন তারা যাতে জনগনের বিরোধী শক্তির সাথে অসহযোগী হন ।তার অনুরোধে জনগন সর্বাত্বক অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দেয় ।এরপর বঙ্গবন্ধু দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচী ঘোষনা করেন । এর মধ্যে ছিল তিন মার্চ অধিবেশন বসার দিনকে শোক দিবস ঘোষনা ও ৩ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত সকাল থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল ।

এ আন্দোলন কে দমানোর জন্য সামরিক কতৃপক্ষ বেপরোয়া হয়ে রেডিও মারফত ঢাকায় সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে । কিন্তু জনতা কারফিউ ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিল করে ।তাদের স্লোগান ছিল “সান্ধ্য আইন মানি না”, “বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন কর”, জয় বাংলা ইত্যাদি । আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে অনেকে আহত হন । তেজগাঁও এ সংঘর্ষে দুজন ছাত্র নিহত হয় ।

ইতিমধ্যেই ঢাকা থেকে বিভিন্ন স্থাপনায় বাংলা নাম বসতে থাকে । যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন্নাহ হল হয় সুর্য্য সেন হল , ইকবাল হলের নাম হয় জহুরুল হক হল ,পাক মোটর এর নতুন নাম হয় বাংলা মোটর , জিন্নাহ এভিনিউ এর নাম হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ।

এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে ভুট্টো এক সমাবেশ এ দাবী করেন তার দল বঞ্চিত জনগনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনি সংলাপে বসতে প্রস্তুত ।
এদিকে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে ন্যাপ ও আতাউর রহমান খানের নেতৃত্ব জাতীয় লীগ পৃথক সমাবেশ করে । তারা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ কর্মসুচীকে সমর্থন করেন ।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD