১৫ মার্চ ১৯৭১ “ইয়াহিয়ার আগমন ও বাঙ্গালীদের খেতাব বর্জন”

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১
১৫ মার্চ ১৯৭১ “ইয়াহিয়ার আগমন ও বাঙ্গালীদের খেতাব বর্জন”

এইদিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঢাকায় এসে উপস্থিত হন। তিনি উপরে আলোচনা করার কথা বলেন কিন্তু ভিতরে নিয়ে এসেছেন অতি ভয়ংকর এক গনহত্যার নীলনকশা যা বাঙ্গালী জাতি কোনদিন কল্পনাও করেনি ।কড়া পাহারায় তাকে বিমানবন্দর থেকে প্রেসিডেন্ট ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ইয়াহিয়ার উপস্থিতি সত্ত্বেও বীর বাঙ্গালীর আন্দোলন সংগ্রাম থেমে ছিল না।

সর্বক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নির্দেশানুযায়ী প্রশাসন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চলছিল। কোনরকম ছাঁটাই বা শাস্তির ভয় উপেক্ষা করে সামরিক প্রতিষ্ঠানের ১১০০ বেসামরিক কর্মকতা কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকে । তারা সামরিক আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করে এবং নাখালপাড়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ কর্মসূচীতে একাত্বতা প্রকাশ করেন।

এদিন বায়তুল মোকাররমে ছাত্রলীগের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় ছাত্রনেতারা বলেন এখন থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমাদের উপর সামরিক আইন প্রয়োগ করার আর কারোর ক্ষমতা নেই ।বাংলাদেশের মানুষ এখন থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই চলবে। পাকিস্তানী অস্ত্রভর্তি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে কিন্তু জনগন তা খালাস করতে দেয়নি। এ বিষয়ে জনতাকে আরো সজাগ থাকতে হবে। তারা আরো বলেন আর শহীদ নয় এবার জনগনকে গাজী হয়ে বিদেশী সৈন্যদের মোকাবেলা করতে হবে। সভা শেষে তারা মিছিল বের করে প্রেসিডেন্ট হাউজের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে।

কবি বেগম সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে তোপখানা রোডে এক মহিলা সমাবেশ ঘটে। বেতার ও টিভি শিল্পীরা শহীদ মিনারে দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করে। উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর সদস্যারা বিভিন্ন স্থানে পথনাটক করে।

এদিন বাংলার প্রবীন সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক মুনীর চৌধুরি তাদের পাকিস্তানী খেতাব বর্জন করেন। এছাড়াও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সব শিল্পী সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তানী খেতাব বর্জনের আহ্বান জানান।

এদিকে করাচীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন “কেন্দ্রে আওয়ামীলীগ ও পিপিপির সমন্বয়ে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হবে। কারনে দুই অংশের মধ্যে অনেক দুরত্ব থাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে পাকিস্তান শাসন করা যাবে না”। অনেক পাকিস্তানী নেতাও ভুট্টোর এই উক্তির করা সমালোচনা করেন।

এদিন অধ্যাপক আবুল ফজলের সভাপতিত্বে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান প্রমুখ। তারা বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচীর সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন। বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি টেলিভিশন শিল্পীদের এক সমাবেশে শিল্পীরাও স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহনের কথা বলেন। বক্তব্য রাখেন সৈয়দ হাসান ইমাম,শওকত আকবর রওশন জামিল প্রমুখ অভিনেতা।

একই দিনে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে খুলনা বগুড়া নেত্রকোনা রংপুর কুমিল্লা কুষ্টিয়া ও লাকসামে বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন স্বাধীনতার স্বপক্ষে সভা সমাবেশ করে।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD