১৮ মার্চ ১৯৭১

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১
১৮ মার্চ ১৯৭১

আরেকটি অগ্নিঝড়া দিন বাঙ্গালী জাতি অতিবাহিত করে। ১৯৭১ সালের এইদিনে পুর্ব বাংলার সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষিত একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। গত ২ মার্চ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত সারা প্রদেশে যেসমস্ত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এবং বেসামরিক প্রশাসন কে সাহায্য করার জন্য কি ধরনের পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সাহায্য নেওয়া হয়েছিল এবিষয়ে তদন্ত করার জন্যই এ কমিশন তৈরি করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই তদন্ত কমিশনকে প্রত্যাখান করেন। কারন হিসেবে তিনি বলেন সামরিক আদেশে এ কমিশন গঠন ও তাদের কাছেই রিপোর্ট পেশ করা দুটোই আপত্তিকর। এই রিপোর্ট কখনো জনগনের কাছে উন্মুক্ত হবে না। তাই এই কমিশন কারোর দাবী পূরন করতে পারবে না। এজন্য তিনি সবাইকে এই কমিশনকে সাহায্য না করার আহবান জানান।

এইদিন বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের মধ্যে কোন বৈঠক হয় নি। তবে প্রেসিডেন্ট হাউজে ইয়াহিয়া খান তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এদিন বিভিন্ন সংগঠন মিছিল করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে ।বঙ্গবন্ধু প্রত্যেকটি মিছিলের সামনে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে সমবেত জনতার করতালি ও অভিবাদনের জবাব দেন। মিছিল থেকেই তারা বঙ্গবন্ধুর কাছে অনুরোধ করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে আর কোন আলোচনায় না বসার জন্য।

প্রত্যেকের সামনেই বঙ্গবন্ধু সবাইকে ধৈর্য রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন সর্বাত্বক প্রস্তুতি নিয়ে তোমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। জনতাকে চুড়ান্ত লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। শান্তিপূর্নভাবেই দাবী আদায় হয় তো ভালো নাহলে দুর্গম সংগ্রাম করেই আমরা লক্ষ্যে পৌছাবো।

এদিন বিপুল পরিমান দেশি বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সামনে জড়ো হয়। বঙ্গবন্ধু বিদেশি সাংবাদিকদের দৃষ্টি তার বাসভবনের সামনে জড়ো হওয়া মানুষের ঢলের প্রতি আকর্ষন করে বলেন আমার দেশের মানুষ আজ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় অটল অবিচল। সংগ্রাম ও ত্যাগের মন্ত্রে তারা আজ উজ্জীবিত। কারো সাধ্য নেই এই জনসমুদ্রকে দাবায়ে রাখার। একজন বিদেশী সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেন যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্র্তিদিন সৈন্য ও অস্ত্র আসছে, আপনি এ খবর জানেন কি না ? বঙ্গবন্ধু বলেন আমার দেশে যা কিছু ঘটে তার সবই আমি জানি।

এদিন সকালে ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। করাচীতে এক সংবাদ সম্মেলনে পিপিপি প্রধান জুলফিকার ভুট্টো বলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তাকে শাসনতান্ত্রিক আলাপের জন্য ঢাকায় আসার আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন তা আমি প্রত্যাখান করছি। ঢাকায় আসার প্রশ্নে তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে পাননি বিধায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। নিরীহ শ্রমিকদের আক্রমন করে তাদের ট্রাক দখল, লুটপাট ও প্রহার করা হয়। সাধারন জনগনকে আটকে রেখে টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার মত ঘটনা ঘটে। এতে জনগন বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করে। রাতে আওয়ামীলীগের নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন বারবার প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজকর্ম অব্যাহত রয়েছে। বিনা অজুহাতে সাধারন নাগরিকদের অপদস্থ করা হয়রানি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। সারা দেশে সেনাবাহিনীর এ উস্কানীমূলক কর্মকান্ডে জনগন আজ বিক্ষুব্ধ। এধরনের উস্কানীমূলক আচরন আর যে মহলের হোক বরদাস্ত করা হবে না।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD