২১ মার্চ ১৯৭১ “ভুট্টোর আগমন ও আলোচনার নতুন মোড়”

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১
২১ মার্চ ১৯৭১ “ভুট্টোর আগমন ও আলোচনার নতুন মোড়”

এদিন পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ১০ জন উপদেষ্টা সহ করাচী থেকে ঢাকায় আসেন। তার আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়। কড়া নিরাপত্তায় তাকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেনা প্রহরায় তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। বিমান বন্দর থেকে হোটেলে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই ধারে দাড়িয়ে আন্দোলনকারীরা ভুট্টোবিরোধী স্লোগান দেয় কারন ততদিনে তিনি বাঙ্গালীদের কাছে একজন উচ্চাভিলাসী ক্ষমতালোভী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছেন। প্রায় দুই ঘন্টা তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনে অবস্থান করে ইয়াহিয়া খানের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। হোটেলে ফিরে লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি শুধু এইটুকু বলেন যে “সব ঠিক হয়ে যাবে”।

এইদিন বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে পঞ্চম দিনের মত বৈঠক করেন ।বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। এদিনও বঙ্গবন্ধু তার চার দফা দাবীতে অনড় ছিলেন। ইয়াহিয়ার পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছিল যে আগে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসুক ।বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন আমরা প্রেসিডেন্ট কে আমাদের কথা জানিয়ে দিয়েছি। এখন প্রেসিডেন্টকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভুট্টোর আগমন প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে বঙ্গবন্ধু বলেন যে “এটি আকস্মিক কিছু নয়।

প্রয়োজনের স্বার্থে যে কোন ব্যাপারে আমরা মিলিত হতে পারি”। এদিকে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করার পুর্বে বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে পাকিস্তানের বিশিষ্ট আইনজীবী একে ব্রোহির এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মিলিত হন। এরপর বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে আসেন পাকিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড ।তিনি এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্যের হাত বাড়াবেন বলে বঙ্গবন্ধুকে আশ্বস্ত করেন।

এদিনেও সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকে। সর্বস্তরের শত হাজার মানুষ মিছিল করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যায়। তারা স্লোগান দেয় “জয় বাংলা” , “তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা” “বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন কর” ইত্যাদি। সেখান থেকে তারা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে যায়। বঙ্গবন্ধু তাদের উদ্দেশ্যে বলেন “বাংলাদেশকে আর কোনভাবে উপনিবেশ বা বাজার হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া চলবে না। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে”।

এদিকে চট্টগ্রামে এক জনসভায় মাওলানা ভাসানী বলেন “এইসব আলোচনা কোন ফল আনতে পারবে না। এদেশের বিচারপতি থেকে চাপরাশি যখন ইয়াহিয়া খান কে মানে না তখন শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত”
এদিন বিভিন্নত রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত কর্মসূচীর উপর তাদের সমর্থন ঘোষনা করেন এবং আগামী ২৩ শে মার্চ প্রতিরোধ কর্মসূচীর ঘোষনা দেন।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD