২৪ মার্চ ১৯৭১ “আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়”

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১
২৪ মার্চ ১৯৭১ “আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়”

একাত্তর সালের এই সময়টি ছিল রাজনৈতিক উদ্বেগ ও উত্তেজনাময়। যতই দিন গড়াচ্ছিল বাঙ্গালী জাতির অস্থিরতা ততই বাড়ছিল। এদিন বঙ্গবন্ধু ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে কোন বৈঠক হয়নি। কিন্তু এবার তিনি আপসহীন ভাবে ঘোষনা দিলেন “আর আলোচনা নয় এবার চাই ঘোষনা”।এর পরেও যদি সিদ্ধান্ত দেওয়া না হয় তাহলে বাঙ্গালীরা নিজেদের পথ নিজেরা বেছে নেবে।

সামরিক সরকারের প্রতি তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন আর যদি জনগনের উপর কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে তা আর সহ্য করা চলবে না। এদিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট হাউজে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও প্রেসিডেন্ট এর উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাজউদ্দিন আহমদ ও ডঃ কামাল হোসেন।

গত কয়েকদিনে মুজিব ইয়াহিয়া আলোচনা থেকে অর্জিত কিছু বিষয় নিয়ে বৈঠক করা হয়। রাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন “অনির্দিষ্ট কাল ধরে আলোচনা চলতে পারে না। আমরা আমাদের বক্তব্য প্রেসিডেন্টের কাছে সুস্পষ্টভাবে উত্থাপন করেছি।

এ বিষয়ে যা বলার এখন তিনিই বলবেন। সিদ্ধান্ত তাকেই ঘোষনা করতে হবে”। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মিলিটারী ও জনতার সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। বিশেষ করে সৈয়দপুরে স্থানীয় অবাঙ্গালী বিহারীদের সাথে নিয়ে মিলিটারীরা হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

রংপুরে একটি হাসপাতালের সামনে জনতা ও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। ফলে সেনাবাহিনী গুলিবর্ষন করে। এতে ৫০ জন হতাহতের খবর পাওয়া যায় এবং অনেক লোক আহত হয়। এদিন চট্টগ্রামে নৌবন্দরে পাকিস্তানী সেনারা সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়। প্রায় ৫০ হাজার বীর বাঙ্গালী তাদের ঘেরাও করে।

তারমধ্যেও সেনারা কিছু অস্ত্র খালাস করে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে ফলে সংঘর্ষ হয়। এখানে সেনাবাহিনীর গোলাগুলিতে প্রায় ২০০ জন শ্রমিক হতাহত হন। এছাড়াও এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে সৈন্য সমাবেশ হচ্ছিল।

এদিন থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা একে একে ঢাকা ত্যাগ করতে থাকেন। অনেক পার্লামেন্টারী নেতারা এদিন ঢাকা থেকে করাচী যান। কিন্তু জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় থেকে যান। তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে গোপনে বৈঠক করেন। বৈঠকের পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন “পুর্বাঞ্চলের অবস্থা খুব দুর্ভাগ্যজনক এখানকার জনগনের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা চেষ্টা করছি কিন্তু জাতীয় দায়িত্বে ক্ষেত্রে আমাদের সর্বাত্বকভাবে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে হবে”।

এদিন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অন্যায়ভাবে গুলিবর্ষন ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রতিবাদে ঢাকা রেডিও ও টেলিভিশনের বাঙ্গালী কলাকুশলীরা কাজ বর্জন করেন এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্প্রচার বন্ধ করে দেন।

পুর্বপাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন এদিন সর্বাত্বক ভাবে বঙ্গবন্ধু আহ্বান মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাবার মত প্রকাশ করে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও যশোরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআরের সদস্যরা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে।

অনেক বাঙ্গালী অফিসার সৈন্য বিদ্রোহ শুরু করে এবং কিছু বিদ্রোহের প্রস্তুতি গ্রহন করে। এ খবর দ্রুত ক্যান্টনমেন্টে পৌছে যায়। এরপর ইয়াহিয়া খান ও সামরিক জান্তাও প্রস্তুতি নেয় ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা করার জন্য।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD