এমসি কলেজে গণধর্ষণ, সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি

ডেস্ক রিপোর্ট
দক্ষিণ বাংলা রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১
এমসি কলেজে গণধর্ষণ, সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার বিচারকার্য একই আদালতে এবং একসঙ্গে করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আলোচিত এ ঘটনার পরবর্তী বিচারকার্য দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ রোববার পর্যন্ত সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়নি। গণধর্ষণ মামলাটি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে ছিল।

গণধর্ষণ, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির দুটি পৃথক মামলা একই আদালতে একসঙ্গে বিচার করা নিয়ে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ রোববার পর্যন্ত মুলতবি ছিল।

সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর) রাশেদা সাঈদা খানম বলেন, দুটি মামলা একসঙ্গে বিচারকার্য নিয়ে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম মুলতবি রাখা হয়েছিল। এ অবস্থায় একইসঙ্গে একই আদালতে দুটি মামলার বিচারকার্য পরিচালনার উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে আমরা অবহিত হয়েছি। নির্দেশনার গেজেট হাতে এলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে রোববার সাক্ষ্যগ্রহণের ধার্য তারিখ থাকায় সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ।

বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান শহীদুজ্জামান চৌধুরী জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশের পরপরই দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তর হয়ে বিচারকার্য শুরু হবে বলে আমাদের জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক ইনাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, মহানগর দায়রা জজ আদালতে দণ্ডবিধি ২৫০ নম্বর মামলাটির শুনানির তারিখ ছিল গত ১০ ফেব্রুয়ারি। তখন আমরা হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিষয়টি আদালতকে অবগত করলে আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখেন এবং হাইকোর্টের আদেশের কপি অপেক্ষা রয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশ প্রাপ্তির পর দায়রা ২৫০/২০২১ মামলাটিও দ্রুতবিচার টাইব্যুনালে স্থানান্তর হবে।

তিনি আরও জানান, ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের আগে তার স্বামীকে (মামলার বাদী) মারধর ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়। ধর্ষণ মামলার আট আসামিই এই মামলার আসামি। এতে ধর্ষণ মামলার ৫১ জন সাক্ষীকেও সাক্ষী রাখা হয়েছে।

একই ঘটনার পৃথক দুটি মামলা একই ট্রাইব্যুনালে চললে বাদীপক্ষ ন্যায়বিচার পাবেন। সেইসঙ্গে বিচারকার্য বিলম্বিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই আইনজীবী বলেন, আলোচিত ঘটনাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের জন্য সরকার আগ্রহী হওয়ায় রিকুইজিশনটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। লোমহর্ষক এ ঘটনার বিচার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে করাই উত্তম হবে বলে তিনি মনে করেন।

আদালত সূত্র জানায়, সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে ধর্ষণের দুটি মামলার বিচারকার্য একই আদালতে ও একসঙ্গে করার জন্য গত ৭ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে হাইকোর্ট নিরাপত্তার বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন।

এর আগে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি রাখা হয়। বাদীর আবেদনে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া ও আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিয়োগসহ কিছু অসংগতি তুলে ধরেন বাদীপক্ষের আইনজীবী।

আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত ৭ ও ৮ নম্বর আসামি আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাহ-উল ইসলামের পক্ষে কোনো আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়নি। তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইনজীবী নিযুক্ত করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর কথা। কিন্তু এই ফাঁক রেখে বিচারকার্য সম্পন্ন হলে এই আসামিরা পরবর্তী সময়ে অনুকম্পা পাওয়ার সুযোগ পাবেন।

প্রসঙ্গটি আবেদনে উদ্ধৃত করা হয়েছে এভাবে- ‘৭ ও ৮ নম্বর আসামি কোনো ওকালতনামা দেননি। স্টেট ডিফেন্স না করে জবরদস্তিমূলে মামলার বিচার করার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।’

জানা যায়, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক গৃহবধূকে (২০) দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় তার স্বামী বাদী হয়ে মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পর আসামিরা ছাত্রাবাস থেকে পালিয়ে গেলেও তিন দিনের মধ্যে ছয় আসামি ও সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ও র্যা ব।

গ্রেফতারের পর আটজন আসামিকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরে সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। আসামিদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মামলার পৃথক দুটি অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

অভিযোগপত্রে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম ওরফে রাজনকে দল বেঁধে ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। আসামি রবিউল ও মাহফুজুরকে ধর্ষণে সহায়তা করতে অভিযুক্ত করা হয়। আট আসামিই বর্তমানে কারাগারে আছেন। তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচিত।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD