মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ব্যবহৃত ট্রলার পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
দক্ষিণ বাংলা শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২
মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ব্যবহৃত ট্রলার পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ

বরিশালের বাবুগঞ্জে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ব্যবহৃত একটি ট্রলার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ও ভূক্তভোগী এবং তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমার উপস্থিতিতে তার দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা বলেছেন, রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করা ট্রলারটিতে আগুন দেয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে, কারন ট্রলার মাঝি আনোয়ারই জানিয়েছেন গ্যাসের চুলা থেকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেইসাথে আকস্মিক ট্রলারটিতে আগুন লাগায় তিনিও কিছুটা হতভম্ব হয়ে যান। যদিও ট্রলার মাঝি আনোয়ার মোবাইল ফোনে জানান, ট্রলারটি ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা মৎস কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর আনোয়ারের বৃদ্ধ বাবা জানান, ট্রলারে আগুন দেয়ার ঘটনার পর থেকে তার ছেলে, ছেলেবউসহ পরিবারের সবাই ভেঙ্গে পরেছেন। কারন আনোয়ারের ভাড়ায় আনা এই ট্রলারটিই ছিলো পরিবারের একমাত্র আয়ের পথ। এখন আনুমানিক তিনলাখ টাকা মূল্যের ট্রলারটি কিভাবে তার মালিককে বুঝিয়ে দিবেন তা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন। এদিকে ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে থাকা বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই হান্নান মিয়া জানান,অভিযান শেষে বাবুগঞ্জ (কেদারপুর) খেয়াঘাটে আনোয়ার হোসেনসহ অভিযানিক দলের নৌযানগুলো আনা হয়।

পরে নৌযানগুলো থেকে জব্দ হওয়া জাল ও মাছ তীরে ওঠানো হয়। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান, মৎস কর্মকর্তা, থানা পুলিশের সদস্যদের উপস্থিতিতে ইউএনও বিভিন্ন এতিমখানায় জব্দ ইলিশ বিতরণ করেন এবং জব্দ জাল পাশেই নদী তীরেই পুড়িয়ে ধ্বংস করেন। এর কিছু সময় পরেই হঠাৎ করে ইউএনও আনোয়ারের ট্রলারটির সামনে যান এবং তার দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। তবে এরআগেই তুচ্ছ ঘটনায় ইউএনও আনেয়ারের ওপর চটলে সে পালিয়ে যায়। অভিযানে যাওয়া থানা পুলিশের সদস্যদের বরাত দিয়ে বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন,আমি পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে যেটুকু জেনেছি তা আপনারাও শুনেছেন। আনোয়ারকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হলে, সে ভয়ে পালিয়ে যায়। পরে ইউএনও সাহেবের সাথে থাকা দেহরক্ষী আনসার সদস্যদের দ্বারা ডিজেলের মাধ্যমে ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তবে কি কারনে ট্রলারটিতে আগুন দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলতে পারবেন। আর ঘটনাস্থলে আজ কোন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথাও আমার জানানেই।তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ নিয়ে থানায় আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলা মৎস কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরে কল দেয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পাশাপাশি তাকে উপজেলা সদরে গিয়েও খুজে পাওয়া যায়নি। আর বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কাজী ইমদাদুল হক দুলাল জানান, তিনি থাকতে ট্রলারে অগ্নিসংযোগ ঘটানোর মতো কোন ঘটনা দেখেননি। তাই এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারে ন না।তবে ঘটনাস্থলে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেহরক্ষী আনসার সদস্য মামুন হাওলাদার ও সুকদেব দাস জানিয়েছেন, যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা বিভিন্ন এতিমখানায় জব্দ ইলিশ বিতরণ করছিলেন, তখন ট্রলারটির ভেতরে হঠাৎ করেই আগুন জ্বলতে দেখেন। আর বিষয়টি সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনিসহ সবাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুনের ব্যপ্তি ছড়িয়ে পরলে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা বলেন, যখন ট্রলারটিতে আগুন জ্বলছিলো তখন তিনি তা যেমন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন, তেমনি অন্য নৌযানগুলোর ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টাও করেন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে ট্রলারের আগুন নেভানোর পাশাপাশি পাশেই পুড়িয়ে ধ্বংস করা জব্দ জালের আগুনও নেভাতে শুরু করে। তখন তিনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাকে জালের আগুন না নেভানোর জন্য আশপাশে চলমান বিভিন্ন ইঞ্জিনের উচ্চ শব্দের কারনে চিৎকার করে বলতে থাকেন। আর কেউ একজন এ সময়কার ভিডিও করে ছড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়। সম্ভবত এটি সরকার, সরকার পক্ষ কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বড় একটি এজেন্ডা মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা সেটিকে বানচাল করতে বাবুগঞ্জে কিছু সার্থান্বেসী মহালা এটা করছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ ট্রলার মাঝিকে সহায়তা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আনোয়ার হোসেনের ট্রলারটি প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিলো। যা আমাদের কাজে লাগছিলো সেটিতে আগুন দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং আগুন লাগার পর আমিসহ ঘটনাস্থলে থাকা সবাই হতবাক হয়ে যায়। আমি তাৎক্ষনিক আনোয়ার মাঝিকে খুজেও পাইনি। তবে পরে তার কাছ থেকে জানতে পেরেছি গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগেছে ট্রলারটিতে।

এ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ উঠতে পারে তাও ভাবতে পারিনি। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমরা মা ইলিশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। এদিকে পুলিশের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তাদের বিষয় তারা কি বলেছে সেটাই তারাই ভালো জানেন। তবে অগ্নিসংযোগের কোন ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত ষ্টেশন অফিসার আব্দুল মালেক জানান, খবর পেয়ে বৃহষ্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাত ৯টা ৫ মিনিটে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইটি ফায়ার ষ্ট্রিগুইসার দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছি। অগ্নিকান্ডের কারন ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অজ্ঞাত বলে জানিয়েছেন আব্দুল মালেক।এদিকে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। উল্লেখ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযানিক দলের সাথে থাকা অন্য ট্রলার মাঝিরা বলেন, আনোয়ার মাঝির ট্রলার আগে থেকেই ‍থানা পুলিশের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হতো। সেই সূত্র ধরেই মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ট্রলারটি ব্যবহার করা হচ্ছিলো। তবে সম্প্রতি অভিযানে জব্দ হওয়া মাছ ও জাল আনোয়ার মাঝির ট্রলারে ওঠালেই তার পরিমান কমে যেতো।এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাও করেন। এর কিছুক্ষন পরই সেখান থেকে সরে পরেন আনোয়ার মাঝি। পরবর্তীতে ট্রলারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD