‘দিনে দ্যাশশো টাহা আয় অইলে খামু কী আর ঘরের মানসেরে খাওয়ামু কী’

দক্ষিণ বাংলা
দক্ষিণ বাংলা সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

অনলাইন ডেক্স: ‘আগে এক সময় মানসে কিন্না খাইতো। এহনগার গুড়াগাড়ায় চেনেও না। তয় শইলের জইন্ন খুব ভালো। পাকনা আইট্টা কলা। গাও-গেরামেও খুব বেশি পাওয়া যায় না। যা পাই হেইয়্যা বেইচ্যা সোংসার চালাই। কিন্তু সোংসার চলে না বাপ। দিনে দ্যাশশো (দেড়শ) টাহা আয় অইলে খামু কি আর ঘরের মানসেরে খাওয়ামু কি?’ ৮৫ বছরের আসাব আলী হাওলাদার এভাবেই জানাচ্ছিলেন তার দুঃখের কথা।

শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে কথা হয় বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে পড়া আসাব আলীর সঙ্গে। তিনি বরিশাল নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুরে বস্তির শেষ প্রান্তের একটি ঝুপড়ি ঘরে ভাড়া থাকেন। সংসারিক জীবনে তিনি দুই ছেলে এক মেয়ের বাবা। দুই ছেলে দিমজুরি করে নিজেদের সংসারই চালাতে পারেন না তাই এখনো কাজ করতে হয় আসাব আলীকে।

মাসে আড়াই হাজার টাকা ঘর ভাড়া সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল আলাদা দিতে হয় তাকে। এর ওপরে চড়া বাজারদরের কারণে প্রায়ই অভূক্ত থাকেন। তারপরও মানুষের কাছে হাত পাতেন না আসাব আলী।

আসাব আলী খান বরিশাল নগরীতে একমাত্র বিচিকলার ফেরিওয়ালা। তিনি শুধুমাত্র বিচিকলা বিক্রি করেন। শুদ্ধ বাংলায় বিচিকলা বলা হলেও আঞ্চলিক ভাষায় এই ফলটি আটিয়া কলা, আইট্টা কলা নামে সমধিক পরিচিত।

তিনি জানান, প্রতিদিন ভোরে উঠে নগরী ও আশপাশের গ্রামে চলে যান তিনি। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিচিকলার কাদি কিনে এনে বাসায় রেখে দেন। যেগুলো পেকে যায় সেগুলো শহরের অলিগলিতে ফেরি করে বিক্রি করেন।

অন্যান্য কলার দাম সময় বিশেষে হ্রাস-বৃদ্ধি হলেও সারাবছরই তিনি প্রতি হালি ৪০ টাকা করে কলা বিক্রি করে থাকেন।

তিনি জানান, সারাদিন ঘুরে ৫/৬শ টাকার বিক্রি হয় না। যেদিন ৬শ টাকা বিক্রি করতে পারি সেদিন দেড়শ টাকা লাভ হয়। ওই আয় দিয়েই দুজনের সংসার চলে।

‘কি করমু বাপ, বাজার দরেতো জীবন খাইয়া দিলো।’ বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন আসাব আলী।

তিনি আরও বলেন, আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুরে আমার জমি ছিল। কিন্তু এলাকার মানুষ একটি মসজিদ উঠায়েছে তাতে আমার জমি দখল হয়ে গেছে। এরপর থেকেই আমি বরিশালে চলে আসছি। এহন আমি ভূমিহীন। বুড়া হইয়া গ্যাছি শইলে এহন আর টানে না। হেরপরওতো প্যাট চালাইতে কামে নামি। কিন্তু অসুখ হইলে আর উপায়ন্ত থাহে না। থাকপেইবা ক্যামনে দিনে যার দ্যাশশো টাহা আয় হ্যার আবার জীবন কি? হ্যার আবার অসুখ কিয়ের?

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনি বলেন, পলাশপুরে বেশ কয়েকজন কলা বিক্রি করেন। আসাব আলীকে আমি চিনি। তিনি দরিদ্র এজন্য যখন যেমন সামর্থ হয় সাহায্য করে থাকি।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD