১০ মার্চ ১৯৭১ “সর্বত্র উড়তে থাকে বাংলাদেশের পতাকা”

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১
১০ মার্চ ১৯৭১ “সর্বত্র উড়তে থাকে বাংলাদেশের পতাকা”

মূলত পহেলা মার্চ থেকেই পুর্ব বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিটা নির্দেশ মেনে চলছিল ।একমাত্র সেনা ছাউনিগুলো ছাড়া প্রদেশের সকল সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান অফিস আদালত চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ।সর্বত্র উড়তে থাকে বাংলাদেশের মানচিত্র সংযুক্ত লাল সবুজের পতাকা এবং সাথে কালো পতাকা । এসময় হতেই ঢাকা আন্তর্জাতিক খবরের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে । বিদেশী সাংবাদিকগন প্রতিনিয়ত খবর সংগ্রহ করছিল । এইদিন বঙ্গবন্ধু এক সাংবাদিকদের বিবৃতি দিয়ে বলেন, সামরিক বাহিনী এখন উন্মত্ত আচরণ করছে । তারা প্রতিনিয়িত জাহাজে করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অস্ত্র আনছে ।তিনি এ সৈন্য সমাবেশ ও অস্ত্রসজ্জা বন্ধের দাবী জানান ।তিনি আরো বলেন, যারা ভেবেছিল যে শক্তি প্রয়োগ করে যা খুশি তাই বাঙ্গালীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে তাদের স্বরুপ বাঙ্গালীরা চিনে ফেলেছে ।

এখনো এদের উপলব্ধি না আসাটা দুঃখজনক । এদিন পশ্চিম পাকিস্তানে তেহরিক ই ইশতেকলাল পার্টির চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল আসগর খান বলেন শেখ মুজিবের উপর দোষ দেওয়ার কোন যুক্তি বা সুযোগ নেই কারন বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার পক্ষে অন্য ভুমিকা নেওয়া সম্ভব না।
এদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের উদ্যোগে এক কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয় ।সভায় ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতারা সামরিক বাহিনীর মধ্যে বাঙ্গালী সদস্যদেরকে উপনিবেশবাদী পাকিস্তানী সরকারকে সাহায্য না করার আবেদন জানান ।

এদিন বিকেলে ন্যাপ(ওয়ালী) এর উদ্যোগে ঢাকা নিউমার্কেটে এক পথসভা করা হয় ।সভায় অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ শোষনমুক্ত স্বাধীন বাংলা গড়ার আহ্বান জানান । এর পাশাপাশি বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত “লেখক শিল্পী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ”বায়তুল মোকাররম থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত এক বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করে ।
দেশের পাশাপাশি প্রবাসী বাঙ্গালীরাও বসে ছিল না ।এদিন নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙ্গালী ছাত্ররা জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করে এবং বাঙ্গালীদের হত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে স্বারকলিপি পেশ করে ।

করাচীতে ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান বলেন ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে আমাদের শাসনতন্ত্র প্রনয়ন আবশ্যক। শেখ মুজিবের সাথে আলোচনা করার জন্য ১৩ মার্চ তিনি ঢাকায় আসবেন বলে ঘোষনা দেন ।
আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এইদিন এক বিবৃতি দিয়ে নতুন কিছু নির্দেশনামা ঘোষনা করেন। নতুন নির্দেশে সকাল নয়টা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশ দেন ।
জনগন এ অসহযোগ আন্দোলনে সর্বত্রই সতর্ক ছিল । এমনকি এদিন ঢাকা যশোর খুলনা সহ বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী বাজারে বন্দরে জনগনের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় । ফলে নতুন করে সামরিক ফরমান জারি করা হয় ।এদিন নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ৪০ জন বন্দি পালিয়ে যায় ।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD