১৬৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরি ১৪ হাজার বই নিয়ে পরিত্যক্ত পড়ে আছে

দক্ষিণ বাংলা
দক্ষিণ বাংলা রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
বরিশালের সবচেয়ে প্রাচীন পাবলিক লাইব্রেরিটি

অনলা্রইন ডেক্স: লের সবচেয়ে প্রাচীন পাবলিক লাইব্রেরিটি পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত ভবনে। এই গ্রন্থাগারটির বইয়ের সংগ্রহ অবাক করার মতো হলেও স্থানীয় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনায় প্রায় ১২ বছর আগে দাপ্তরিক কাজ বন্ধ হয়ে যায় এটির। পাঠকের জন্য গ্রন্থাগারটি চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়েছে ৮ বছর হলো। গ্রন্থাগারটির সংগ্রহে রয়েছে কমপক্ষে ১৪ হাজার বই।

বিশিষ্টজনরা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি পুনরায় সচল করার দাবি তুলেছেন।

জানা গেছে, ব্রিটিশ সরকারের প্রচেষ্টায় ১৮৩৫ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম প্রতিষ্ঠা করা হয় কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরি। এর ১৫ বছর পরে ১৮৫০ সালে ‘পাবলিক লাইব্রেরি অ্যাক্ট অব ইংল্যান্ড’ পাস করায় উপমহাদেশের বিভিন্নস্থানে স্থাপন করা হয় পাবলিক লাইব্রেরি। ওই অধ্যাদেশের অধীনে ১৮৫৪ সালে বরিশালে এনেক্স ভবনের পাশে ১৭ শতাংশ জমির ওপরে প্রতিষ্ঠা করা হয় বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি।

প্রতিষ্ঠার বছর থেকে ১৩১ বছর পরে ১৯৮৫ সালে লাইব্রেরিটি বরিশালের বান্দ রোডে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ৫৮ শতাংশ জমির ওপর স্থাপন করা হয় এক তলা পাবলিক লাইব্রেরি ভবন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সারাদিন বন্ধ থাকে লাইব্রেরি ভবনের প্রধান ফটক। জরাজীর্ণ ভবনের বিভিন্নস্থান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা। বইয়ের তাকগুলো তালাবদ্ধ। ভেতরে অধিকাংশ বই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রবেশদ্বারে দোকানীরা টং ঘর বসিয়েছেন। কেউ কেউ এটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ হিসেবেও ব্যবহার করছেন।

পাবলিক লাইব্রেরির এমএলএসএস (পিয়ন) পদে দায়িত্বরত শহীদ গাজী জানান, ১০ থেকে ১২ বছর আগেও দিনে দেড়-দুইশ লোক দিনে বই পড়তে আসতেন। এখন লাইব্রেরির মধ্যে সেই পরিবেশও নেই আর পাঠকও আসে না। ১২ বছর ধরে পাঠকের আশায় আছি। আমার মনে হয় না এটি আর চালু হবে। দিনে দিনে শেষ হয়ে গেলো একটি বিরাট ইতিহাস।

লাইব্রেরিটির সদস্য এবং সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরিটি প্রথমে বিবি পুকুর পাড়ের এনেক্স ভবনে চলতো। সেই ভবনটি এখনো আছে। আবার স্থানান্তরিত ভবনও আছে। স্থানান্তরিত ভবনে কমপক্ষে ১৪ হাজার বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। কিন্তু অব্যবস্থাপনায় লাইব্রেরিটি এখন সম্পূর্ণরুপে পরিত্যক্ত পড়ে আছে।আমরা দীর্ঘদিন ধরেই পাবলিক লাইব্রেরিটি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে বিশাল সংগ্রহশালা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ ২০১২ সালের দিকে ১১০০ জন এই লাইব্রেরির সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে আজীবন সদস্য ৬০০ জন আর সাধারণ সদস্য ৫০০ জন। এনেক্স ভবনের পাশে ১৭ শতাংশের মধ্যে ৬ শতাংশ সিটি করপোরেশনের দখলে রয়েছে। এছাড়া লাইব্রেরি ভবনটি আরেকটি সংগঠন ইজারা নিয়ে ব্যবহার করছেন। ওদিকে বান্দ রোডের লাইব্রেরি ভবনের পাশে জেলা প্রশাসন একটি স্কুল চালু করেছিলাম। আমরা এর প্রতিবাদ করে এখন জেলা প্রশাসনের বিরাগভাজন হয়েছি। পদাধিকারবলে পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি হন জেলা প্রশাসন। সর্বশেষ ২০১২ সালে ৭ সদস্যের লাইব্রেরি পরিচালনায় এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির আমিও সদস্য ছিলাম। আমাদের তখনো দাবি ছিল লাইব্রেরিটি পুনরায় চালু করা হোক। এখনো দাবি করছি, ১৬৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগারটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হোক।

জাতীয় কবিতা পরিষদ বরিশালের সভাপতি তপংকর চক্রবর্তী বলেন, ভারত বাংলায় প্রথম যে চারটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তার মধ্যে একটি বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই লাইব্রেরিটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। এটি দুঃখজনক ব্যাপার। লাইব্রেরির সভাপতি জেলা প্রশাসক। এর আগে জেলা প্রশাসকদের কাছে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা তেমন আগ্রহ দেখাননি। বর্তমানে নতুন যে জেলা প্রশাসক এসেছেন তার কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। আমি মনে করি বরিশালের অন্য যে কোন উন্নয়ন কাজে হাত দেওয়ার আগে পাবলিক লাইব্রেরিটি চালু করা কর্তব্য।

প্রবীণ আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম ইকবাল বলেন, বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরিটি ইতিহাসের একটি অংশ। লাইব্রেরিটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে রয়েছে। বিদ্যাশিক্ষার এই কেন্দ্র পুনরায় চালু করা আমাদের সকলের দাবি।

বরিশালের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি নিয়ে সকলের মাঝে আগ্রহ রয়েছে। আমিও চাই লাইব্রেরিটি টিকে থাকুক। লাইব্রেরি চালুর জন্য জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD