৬ মার্চ ১৯৭১: ধনঞ্জয় দে

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা শনিবার, ৬ মার্চ, ২০২১
৬ মার্চ ১৯৭১

অগ্নিঝরা মার্চের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন । এই উত্তাল সময়ে যতই দিন গড়াচ্ছিল ততই বাংলার জনগন যেন স্বাধীনতার দাবীতে ফুঁসে উঠছিল । জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে এসেছিল একটাই দাবীতে “আর নয় পরাধীনতা,এবার চাই স্বাধীনতা”।এইদিনে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কতৃক আহুত হরতাল কর্মসূচীর শেষদিন পালিত হয় ।হরতাল চলাকালে ব্যাংক বীমা অফিস আদালত,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল । হরতাল শেষে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে । জনগন আগামী কালের জন্য গভীর উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করে । কারন আগামীকালের ঐতিহাসিক দিনেই বঙ্গবন্ধু ঘোষনা করবেন ভবিষ্যতের কর্মপন্থা ।

আজকের দিনে বাংলাদেশ ছিল সভা সমাবেশ আর ছাত্র জনতার জঙ্গি মিছিলে উত্তাল । সবগুলো ভবনের শীর্ষে উড়েছিল কালো পতাকা । ষষ্ঠ দিনের হরতালে সর্বস্তরের জনগন রাস্তায় নেমে এসেছিল । ছাত্র ইউনিয়ন শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে । এর সাথে যুক্ত হয় মহিলা আওয়ামীলীগের সভা । প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকেরা প্রতিবাদ সভা করেন । বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক ও লেখক সমাজ প্রেসক্লাব থেকে মিছিল করে বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করে ।

এখানে জার্নালিস্ট ইউনিয়নের সভাপতি কে জি মোস্তফা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলনে অংশগ্রহনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ।ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে নিউ মার্কেট এলাকায় । এখানে বক্তব্য রাখেন সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ,মহিউদ্দিন আহমেদ ও মতিয়া চৌধুরী ।তারা জনগনের নৈতিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন ।এছাড়াও বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ ও উদীচী শিল্পগোষ্ঠী বাংলা একাডেমীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে । বেগম সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে মহিলা পরিষদ বায়তুল মোকাররমে এক সমাবেশ করে । সেখানে নারী নেতৃত্ব যাতে সংগ্রামে পিছিয়ে না পড়ে এবং আন্দোলন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন ।

আজকের দিনে খুলনায় জনতা ও মিলিটারীর সংঘর্ষে ১৮ জন নিহত ও ৬৪ জন আহত হয় । এর প্রতিবাদে সেখানে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয় । এইদিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দরজা ভেঙ্গে প্রায় তিনশো বন্দী পলায়ন করে পলায়নরত বন্দীদের উপর কারারক্ষীদের গুলিবর্ষনে ৭ জন নিহত হয় এবং প্রায় ৪৮ জন আহত হয় ।

আজকের দিনেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেল টিক্কা খানকে পুর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা সরকারী ভাবে ঘোষনা করেন । মুলত সামরিক জান্তা পুর্ব পাকিস্তান তথা বাংলার মাটিতে ভয়ংকর কিছু একটা করতে যাচ্ছে এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছিল । ইয়াহিয়া খান এদিন এক বেতার ভাষন দেন ।এ ভাষনে তিনি সামরিক বাহিনীর হত্যাকান্ডের সাফাই গেয়ে সমস্ত দোষ রাজনৈতিক নেতাদের উপর চাপান এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের নতুন তারিখ ঘোষনা করেন ২৫শে মার্চ। মূলত এটি ছিল আসল ষড়যন্ত্রের একটি অংশ । বাংলাদেশে এক চূড়ান্ত আঘাত হানার আগের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কালক্ষেপন করাই ছিল এর আসল উদ্দেশ্য । জনগন এ ভাষন কে প্রত্যাখান করে এবং গভীর প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশে কি ভাষন দেবেন তা শোনার জন্য ।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD