৭ই মার্চ “বাংলার মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১
৭ই মার্চ “বাংলার মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। একটি নিরস্ত্র জাতির মানসিকভাবে সশস্ত্র হয়ে ওঠার এক উজ্জ্বল মুহুর্ত। ১৯৭১ সালের এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষন দেন। বিশাল জনসভায় তিনি ঘোষনা করেন “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। মূলত এই ভাষনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা এবং বাঙ্গালী জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন ।বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠে এই ঐতিহাসিক ভাষনে পুরো দেশ কেঁপে উঠেছিল। এটি ছিল একটি পুর্বঘোষিত গন সমাবেশ এবং বঙ্গবন্ধুই ছিলেন একমাত্র বক্তা ।

প্রায় দশ লাখ মানুষের বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন ।তিনি প্রথমেই শুরু করেন “ভাইয়েরা আমার”বলে। ১৯ মিনিটের এই ভাষনে বঙ্গবন্ধু ২৩ বছরের পাকিস্তানী বাহিনীর শাসনশোষন ও বাংলার জনগনের উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার ও রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে তার বর্ণনা দেন ।কিভাবে ৫২ সাল থেকে৭১ এর এপর্যন্ত মানুষদের হত্যা করা হয়েছে তা বলেন।

বেশিরভাগ ইতিহাসবিদরা মনে করেন এই ভাষনে বঙ্গবন্ধুর একজন গনতান্ত্রিক নেতা হিসেবে যতটুকু মেধা এবং রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করা দরকার ছিল তিনি ঠিক তাই করেছিলেন ।একদিকে যেমন কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে পাকিস্তানীদের কাছে তার চারদফা দাবী তুলে ধরেন অপরদিকে গোটা বাঙ্গালী জাতিকে তাদের করনীয় সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি তার ভাষনে সামরিক আইন প্রত্যাহার,যেভাবে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করা,সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফেরত নেওয়া এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এই চার দফা দাবী দেন। তিনি জনগনের উদ্দেশ্যে আরো বলেন আর যদি একটা গুলি চলে এবং মানুষদের হত্যা করা হয় তাহলে জনগন যেন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলে। বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষনতার এখানে প্রমান পাওয়া যায়।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন একটা না একটা বড় আঘাত আসবেই। জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় তাই তিনি ভাষনে বলেছিলেন “আমি যদি হুকুম দেওয়ার নাও পারি তোমরা সবকিছু বন্ধ করে দেবে”।তিনি বলেন “দেশের মধ্যে শত্রুপক্ষ ঢুকেছে। তারা বাঙ্গালীদের মধ্যে আত্মকলহ সৃস্টি করতে পারে” এজন্য বাঙ্গালীদের বুঝেশুনে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

হরতাল কর্মসূচীতে অফিস আদালত স্কুল কলেজ ও যানবাহন কিভাবে চলবে তার নির্দেশনা দেন। মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে যারা আহত হয়েছে জনগন যাতে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ায় তিনি সেই আহ্বান করেন। প্রত্যেকটি অঞ্চলে তিনি সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং শত্রুদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান। পরিশেষে তিনি বলেন এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জনগণ যেন মন্ত্রমুগ্ধের মত এই ভাষনকে মনেপ্রানে গ্রহন করেছিল।বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রকন্ঠের উদাত্ত আহ্বানে পুরো জাতি মহামুক্তির আনন্দে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ।এরপরই মুক্তিকামী মানুষেরা ঘরে ঘরে চুড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

আজ বঙ্গবন্ধুর এ ভাষন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ভাষনের মর্যাদা লাভ করেছে। ইউনেস্কোর উপদেষ্টা কমিটি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামান্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ।অর্থাৎ এ ভাষনটি “ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারী হেরিটেজ” হিসেবে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত।

বঙ্গবন্ধুর এ ভাষনটি ছিল অলিখিত। তার ভাষনের আগে পর্যন্ত জনগনের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল ব্যপক,তিনি জাতির উদ্দেশ্যে কি বলবেন কি করবেন!সকলের দৃষ্টি ছিল কেবল তার উপর। তিনি সেদিন যা বলেছিলেন তা শুনে সারা দেশবাসী প্রদীপ্ত অগ্নির মত জ্বলে উঠেছিল।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD