পদ্মা সেতুতে জেলেদের ভাগ্য পরিবর্তনের হাতছানি

রিয়াজ মাহমুদ, পটুয়াখালী প্রতিনিধি
দক্ষিণ বাংলা বুধবার, ২২ জুন, ২০২২

‘আমরা যদি বাজার প্রতিযোগীতায় টিকতে না পরি তাহলে তার প্রভাব পরে হতদরিদ্র জেলেদের উপর। পদ্ম সেতু খুলে গেলে রাতে ধরা মাছ ভোর বেলাই সড়ক পথে মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে পাঠানো যাবে ঢাকায়। এতে করে মাছের গুনগত মান যেমন অক্ষুন্ন থাকবে তেমনি দামও পাওয়া যাবে বাজারের অন্যান্য এলাকার মাছের চেয়ে বেশি। তাই পদ্মা সেতু খুলে গেলে প্রতিযোগীতার বাজারের আমরাই হব সেরা। জেলেরা হবেন বেশি লাভবান।’ আজ বুধবার সকালে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া বন্দরের ভাই ভাই মৎস আড়দের মালিক অমর দাসের সঙ্গে পদ্মাসেতু নিয়ে কথা হলে এভাবেই প্রতিবেদককে কথাগুলো বলেন তিনি। এরপর কথা হয় উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরবেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের প্রবীন জেলে বাদশা মঝির সঙ্গে। তিনি বলেন, রাতভর কষ্ট করে মাছ ধরি। মাঝে মধ্যে বাজার ভালো পাই আবার কম পাই। মহাজন জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালু হলেই নাকি আমাদের ভাগ্য খুলে যাবে। আমরা নাকি মাছ বিক্রি করে বেশি লাভবান হতে পারব।
উপজেলার তেঁতুলিয়া নদী তীরবর্তী কালাইয়া বন্দরের মৎস আড়তদার সমিতির একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, জেলেরা রাতভর মাছ ধরে সকালে নিয়ে আসেন আড়দে। সেই মাছ ফ্রিজিং করে লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার বিকাল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এরপর নদীপথে লঞ্চযোগে রাজধানীতে পৌছাতে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ ঘন্টা লেগে যেত। আবার কোন কোন সময় নদীর নব্যতা সংকট, যান্ত্রিক ত্রুটি, ও লঞ্চের ধীর গতির জন্য ২০ থেকে ২২ ঘন্টাও লেগে যায়। দীর্ঘ সময়ে মাছ বরফে থাকার কারনে মাছের গুনগত মান নষ্ট হয়ে যেত। ফলে ইলিশের বাজারদাম তুলনামূলক কম হওয়া ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাদের।।
উপজেলা মৎস কার্যালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা মাহবুব আলম(ঝান্টা)তালুকদার বলেন,উপজেলার জেণেদের দীর্র্ঘ বছরের একটি সমস্যা ছিল ঢাকায় নদী পথে মাছ পাঠানো। সেই সদস্যা দুর হবে পদ্মাসেতু চালু হলেই।পদ্মাসেতুর ফলে জেলেদের ভাগ্যে পরিবর্তন আসবে । উপজেলায় ১০ হাজারেরও বেশি জেলে পরিবার রয়েছে। যারা তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ শিকার করে এবং জীবিকা নির্বাহ করে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। বাউফল পৌরসভা থেকে ঢাকায় সরাসরি বিআরটিসি (শিতাতাপ নিয়ন্ত্রিত) বাস চালু হবে ২৬ জুন থেকে। এ ছাড়াও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্য যা নদী পথে আসা যাওয়া করতো পদ্মা চালু হলে সড়ক পথে আসা যাওয়া করবে। এসকল যানবাহন যাতে নির্ভিঘেœ চলাচল করতে পারে তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব হাওলাদার বলেন,পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলেই যোগাযোগ ব্যবস্থায় একধাপ এগিয়ে যাবে এতদিন পিছিয়ে থাকা এ অঞ্চল। আসবে নদী ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন। সড়ক পথে নির্ভিঘেœ নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য পৌঁছানো যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এতে করে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলাবাসীর ভাগ্য খুলে যাবে ।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD