সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী মোংলা সমুদ্র বন্দরের আধুনিকায়নে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। মোবাইল হারবার ক্রেনের মাধ্যমে দ্রুত পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে আরো গতি ফিরে পাবে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুপুরে মাল্টিপারপাস মোবাইল ক্রেনের যন্ত্রাংশ নিয়ে মোংলা বন্দরে এসেছে জার্মানীর পতাকাবাহী জাহাজ “এমভি উইবকি।” জাহাজ থেকে যন্ত্র খালাসের পর সেটি স্থাপন করা হবে বন্দরের জেটিতে। অত্যাধুনিক এ ক্রেনটি যত দ্রুত সম্ভব বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে যুক্ত করা হবে বলে জানান বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা।

তিনি জানান বন্দরে কন্টেইনারবাহী ও মেশিনারিজ জাহাজ থেকে দ্রুত পণ্য খালাস করতেই ৫০ কোটি টাকায় কেনা হলো অত্যাধুনিক মাল্টিপারপাস মোবাইল ক্রেন। আমরা সরকারের ভিশন অনুযায়ী সবগুলো উন্নয়ন পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছি।

বন্দর সুত্রে জানা যায়, মোংলা বন্দরের উন্নয়নে গৃহীত নতুন ১০ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পশুর চ্যানেলের রামপাল পর্যন্ত ড্রেজিং, রুজভেল্ট জেটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (ভিটিএম আইএস), আউটার বারে ড্রেজিং, যা শেষ হয়েছে। বন্দরের জন্য টাগবোট সংগ্রহ, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, মোবাইল হারবার ক্রেন সংগ্রহ, স্ট্র্যাটেজিক মাস্টার প্লান, হারবার চ্যানেলের ফুড সাইলো এলাকায় ড্রেজিং ও দুটি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ ও মাল্টি পারপাস মোবাইল ক্রেন ক্রয়। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ জাহাজ চলাচল ও পণ্য খালাস-বোঝাইতে সহজ হবে। বন্দর চ্যানেলে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ জেটি এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে আর মাল্টি পারপাস ক্রেনের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য বোঝাই ও খালাস সম্পন্ন করা যাবে। সর্বোপরি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বন্দরের সক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, অত্যাধুনিক মোবাইল ক্রেন দিয়ে স্প্রেডার, গ্রাব ও হুক অপারেশন চাহিদানুসারে ব্যবহার করা যাবে। জার্মান থেকে আসা জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট আলসেয়াস শিপিং লিমিটেডের স্থানীয় প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন মিলন বলেন, মোংলা বন্দরের জেটি এলাকায় দ্রুত পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের জন্য অত্যাধুনিক দুইটি মোবাইল ক্রেন নিয়ে জার্মানীর সান্ডারল্যান্ড বন্দর থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি মঙ্গলবার দুপুরে বন্দর জেটি এলাকায় নোঙ্গর করেছে। জার্মানী থেকে কেনা এসব যন্ত্রাংশ খালাস শেষে বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) মোংলা বন্দর ত্যাগ করবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ- প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক ও তড়িৎ) মাহবুবুর রহমান মিনা জানান, পোর্ট জেটির কাজে ব্যবহৃত নতুন ক্রয়কৃত ক্রেন দুইটি বিদ্যমান জেটির লোড সহনশীলতার সীমার মধ্যে ৫ থেকে ৯ নম্বর জেটি বরাবর চলাচল করতে পারবে। অত্যাধুনিক মোবাইল ক্রেন দিয়ে স্প্রেডার, গ্রাব ও হুক অপারেশন চাহিদানুসারে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও নতুন এ ক্রেন দিয়ে খুব সহজে কন্টেইনারবাহী গিয়ারলেস জাহাজ হতে কনেন্টইনার বোঝাই ও খালাস অতিদ্রুত করা যাবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ- সচিব মো. মাকরুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বাড়বে কয়েকগুন। বন্দরের অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প আউটার বারে ড্রেজিংয়ের কাজ সমাপ্ত হয়েছে পাশাপাশি ইনারবারে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ধাপে ধাপে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে বন্দরের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।