১২ মার্চ ১৯৭১ “বিক্ষুব্ধ বাংলার শিল্পীসমাজ”

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১
১২ মার্চ ১৯৭১ “বিক্ষুব্ধ বাংলার শিল্পীসমাজ”

অগ্নিঝড়া মার্চের ১২তম দিন । ১৯৭১ সালের এই সময়টিতে বাঙ্গালী জাতি পার করছিল এক উত্তাল । এক একটি মুহুর্ত যেন নতুন ইতিহাসে রূপ নিচ্ছে ।সারা দেশ ছিল আন্দোলন সংগ্রামমুখর । বাংলার দামাল ছেলেরে যেন রাস্তায় নেমে এসেছিল এই সংকল্প নিয়ে যা দাবী আদায় না করে আর ঘরে ফেরা যাবে না ।প্রতিদিনই ছোট বড় অসংখ্য মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে যায় ।বঙ্গবন্ধুর ডাকে সর্বত্র চলছিল অসহযোগ ।জনগন সরকারকে খাজনা ও ট্যাক্স দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল ।পুর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে অর্থ ও পন্য চালান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এইদিন বেশকিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন চলমান স্বাধীনতার আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি পুর্ন আস্থা জ্ঞাপন করেন ।

এদিন চলচ্চিত্র শিল্পীদের একটি সভা শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয় । এতে বক্তব্য রাখেন নায়করাজ রাজ্জাক, মোস্তফা এবং কবরী। এরপর তারা একটি মিছিল বের করে যা টেলিভিশন অফিসের সামনে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ।জনগন এদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে ।এদিন পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের এক সভা অনুষ্ঠিত হয় । ইউনিয়নের সভাপতি আলী আশরাফ ও সম্পাদক কামাল লোহানী সদস্য আ ন ম গোলাম মোস্তফা তেজোদীপ্ত ভাষায় বক্তব্য দেন এবং বলেন দেশব্যাপি চলমান স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে সাংবাদিক সমাজ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না । তারা সর্বশক্তি দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার অংশগ্রহন করার পক্ষে মত প্রকাশ করেন এবং শেষে একটি শোভাযাত্রা বের করেন যা বায়তুল মোকাররমে গিয়ে শেষ হয় ।

এদিন প্রায় অর্ধশত চারু ও কারু শিল্পীর উপস্থিতিতে পটুয়া শিল্পী কামরুল হাসানের আহ্বানে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় । আয়োজিত সভায় মুর্তজা বশির ও কাইয়ুম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে এ সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয় ।এ সভায় শাপলা কে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হিসেবে গ্রহন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।

ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ ময়দানে মাওলানা ভাসানী বলেন “প্রধানমন্ত্রীত্বের পদে লাথি মেরে শেখ মুজিব যদি বাঙ্গালীর স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলনকে সঠিক ভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে তাহলে তিনি ইতিহাসের কালজয়ী বীর হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন”। এদিন লাহোরে তেহরিক ই ইশ্তেকলাল এর প্রধান আসগর খান বলেন যারা বন্দুক বুলেট দিয়ে পুর্বাঞ্চলের জনগন কে দাবিয়ে রাখতে চায় তারা পাগলের প্রলাপ বকছে । এখন যদি পুর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে পশ্চিম পাকিস্তান পাচ বছরের বেশি টিকতে পারবে না । এছাড়াও আতাউর রহমান খান, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, খান এ সবুর,নুরুল আমিন প্রমুখ নেতারা বিবৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান ।

পাকিস্তানের ঐক্য রক্ষা ও গনতন্ত্রের জন্য এই উদ্যোগ নিতে হবে বলে তারা মত প্রকাশ করেন । ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতা ও বিপথগামী সামরিক অফিসারদের জন্য দেশ ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন ।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD