২৩ মার্চ ১৯৭১ “পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে প্রতিরোধ দিবস”

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১
পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে প্রতিরোধ দিবস

এ দিনটি অগ্নিঝরা মার্চের আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন সারা বাংলায় পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে পালিত হয় প্রতিরোধ দিবস। এদিন বাংলাদেশের সর্বত্র স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকা উড়ানো হয়। সেইসঙ্গে গত কয়েকদিন যত লোক শহীদ হয়েছে তাদের স্বরনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তানী পতাকা ওড়েনি।

এদিন পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ এক আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ এর আয়োজন করে। এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি” গানটি গেয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। আকাশে গুলি ছুড়ে পতাকাকে গান স্যালুট দেওয়া হয় ।পতাকা উত্তোলন শেষে ছাত্রছাত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত “জয়বাংলা বাহিনী” সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজ ও মহড়া করে জাতীয় পতাকাকে অভিবাদন করে। সেখানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা জয়বাংলা বাহিনীর গার্ড অফ অনার গ্রহন করেন।

এদিন স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও জয়বাংলা বাহিনী রাজপথে মার্চপাস্ট করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায় এবং মহড়া প্রদর্শন করে মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকা বঙ্গবন্ধুকে প্রদান করে। বঙ্গবন্ধু তাদের অভিবাদন গ্রহন করেন ।বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে তার বাসভবনে পতাকা উত্তোলন করেন। এদিন সকাল থেকেই শ্রমিক লীগ সহ বিভিন্ন দল মিছিল করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে এসে জড়ো হয়। বঙ্গবন্ধু উপস্থিত জনতার সামনে হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং শত্রুদের মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি বলেন “যদিও আমরা শান্তিপূর্নভাবে সমাধান করতে চাই কিন্তু নীতির সঙ্গে আপস হয় না”। এদেশকে আর কলোনী করতে দেওয়া হবে না। যেকোন ত্যাগের বিনিময়ে এদেশকে মুক্ত হয়। “বাংলার মানুষকে আর পরাধীন থাকতে দেবো না”। বক্তব্য শেষে তিনি নিজেই “আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ” “জয়বাংলা” স্লোগান দেন।

মূলত এদিন থেকেই মুজিব ইয়াহিয়া বৈঠক ভেঙ্গে যায়। তবে আলোচনার ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের মধ্যে দুদফা আলোচনা হয়। আওয়ামীলীগের পক্ষে অংশ নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাজউদ্দিন আহমদ এবং ডঃ কামাল হোসেন। প্রেসিডেন্টের পক্ষে অংশ নেন জেনারেল পীরজাদা, বিচারপতি কর্নেলিয়াস ও কর্নেল হাসান।

এদিনেও সারা বাংলা অসহযোগ আন্দোলনের আওতায় ছিল। সারা দেশে সরকারী বেসরকারী ভবন এমনকি বিদেশী দূতাবাসগুলোতেও বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ভুট্টোর উপস্থিতির জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেও এ পতাকা উড়ানো হয়। ভূট্টোর কুশপুত্তলিকায় আগুন লাগানো হয়। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে বেতার কর্মীরা তাদের নিয়মিত সম্প্রচার বন্ধ রাখে। রেডিওতে আমার সোনার বাংলা গানটি বারবার প্রচার করা হয়।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD