২০ মার্চ ১৯৭১ “যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে”

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা শনিবার, ২০ মার্চ, ২০২১
২০ মার্চ ১৯৭১ “যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে”

এদিন বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের মধ্যে চতুর্থ দফা বৈঠক হয়। বৈঠক সোয়া দুই ঘন্টা ব্যাপী স্থায়ী হয়। বৈঠক শেষে বেড়িয়ে এসে বঙ্গবন্ধু দেশি বিদেশী সাংবাদিকদের বলেন আলোচনার কিছুটা অগ্রগতি হচ্ছে। রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করার জন্য তারা এগোচ্ছেন। আগামীকাল আবার তারা বৈঠকে বসবেন।এইদিন বঙ্গবন্ধু তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মিলিত হন। তিনি বলেন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বেচে থাকার জন্য বাঙ্গালী জনগনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

এদিন পাকিস্তানের বিশিষ্ট রাজনীতিক মিয়া মুমতাজ দৌলতানা ও শওকত হায়াত খান বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘন্টাব্যাপি আলোচনা করে। তারা সাংবাদিকদের বলেন যে তারা শান্তিপুর্ণ সমাধান চায়। সারা দেশবাসী মুজিব ইয়াহিয়ার আলোচনার দিকে তাকিয়ে আছে। মুক্তিপাগল মানুষের দৃপ্ত পদচারনায় ঢাকা শহর অচল হয়ে পড়ে। মিছিলের পর মিছিল এগিয়ে যায় শহীদ মিনারের দিকে। ঢাকার রাজপথে ছাত্র ইউনিয়নের একটি সুসজ্জিত বাহিনী সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।

হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দু ধারে দাঁড়িয়ে তাদের অভিনন্দন জানায়। জয়দেবপুরে শ্রমিক জনতার বিক্ষোভ দমাতে সান্ধ্য আইন জারী করা হয়েছিল যা আজকে প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে এই চূড়ান্ত আন্দোলনের সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাক্তন নৌসেনাদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা চলমান স্বাধীনতার আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ কর্মসূচীর প্রতি সমর্থন জানান ।সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের দিয়ে তারা একটি সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন।

এদিনও বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠন মিছিল শোভাযাত্রা করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে এসে জড়ো হয়। প্রত্যেকটি মিছিলের সামনেই বঙ্গবন্ধু অগ্নিঝড়া বক্তব্য দেন ও বাঙ্গালীদের করনীয় সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন লক্ষ্যে পৌছানো না পর্যন্ত দাবী আদায়ের এ আন্দোলন চলবে। এদিনও ছাত্রছাত্রীরা ডামী রাইফেল নিয়ে রাজপথে সামরিক কুচকাওয়াজ করে ।প্রত্যেকদিন সংবাদের পত্রিকায় এসব ছবি ছাপা হতো। যা দেখে সাধারন জনগন উদ্দীপ্ত হতো এবং তারা মানসিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতো।

এদিন করাচীতে জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের বলেন ঢাকা আসার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে তিনি নতুন করে আমন্ত্রণ পেয়েছেন , তিনি আগামী কাল ঢাকায় আসার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

১৯৭১ সালের এইসময়ে একদিকে যেমন আলোচনা চলছিল তেমনি ভিতরে ভিতরে পাকিস্তানি সমরনায়কেরা মেতে উঠছিল এক গভীর ষড়যন্ত্রে ।প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার সামরিক উপদেষ্টাদের সাথে গোপনে বৈঠক করে সামরিক অভিযান প্রস্তুতির বিষয়ে পর্যালোচনা করেন ।প্রতিদিনই বাংলাদেশে বিমানে ও জাহাজে ভর্তি করে সৈন্য ও অস্ত্র আনা হচ্ছিল ।মার্চের শুরু থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত প্রায় দুই ডিভিশনের বেশি সৈন্য সমাবেশ ঘটানো হয় এই বাংলায়। আলোচনার নামে কালক্ষেপন করে তারা তৈরি করে অপারেশন সার্চলাইট নামের গনহত্যার নীলনকশা। জানা যায় আজকের দিনেই এই গনহত্যার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD