১৩ ই মার্চ ১৯৭১

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১
১৩ ই মার্চ ১৯৭১

সারা দেশ যেন স্বাধীকার অর্জনের আকাঙ্ক্ষায় প্রদীপ্ত শিখায় জ্বলছে ।বঙ্গবন্ধুর আহবানে সারা দেশে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে উঠেছিল। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধের অনুশীলন করছিল ।সীমিত অস্ত্র কিন্তু মনোবল ছিল ইস্পাতের মত অটুট।

এদিন ওয়ালী ন্যাপের সভাপতি ওয়ালী খান ঢাকায় এসে পৌছান বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করার জন্য ।উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বঙ্গবন্ধুর চারদফা দাবির প্রতি সমর্থন জানান। মাওলানা ভাসানী এদিন এক বিবৃতিতে শেখ মুজিবের চার দফা দাবী মেনে নিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানান ।এইদিন জাতীয় পরিষদের কিছু সংখ্যালঘু রাজনৈতিক দলের নেতারা এক সভায় মিলিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর চার দফা দাবী কে নীতিগতভাবে সমর্থন করেন। এখানে উপস্থিত ছিলেন জমিয়াতুল উলামায়ের নেতা মুফতি মাহমুদ ,কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা মিয়া মুমতাজ মুহাম্মদ দৌলতানা ,শওকত হায়াত খান,জমিয়াতুল উলামায়ে পাকিস্তানের নেতা শাহ আহমদ নূরানী সহ বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ ।

তারা আরো বলেন শেখ মুজিবের দাবী যৌক্তিক এবং পাকিস্তানের বর্তমান সংকট নিরসনে তা গ্রহন করা জরুরী। এবিষয়ে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা করবেন বলে মত দেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন যে বর্তমান সংকটের দায় পিপিপি প্রধান জুলফিকার ভুট্টোর উপর বর্তায় । কারন তিনিই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বন্ধ করার হুমকি দিয়ে এ নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন।

এই দিন জেনারেল টিক্কা খান পুর্ব পাকিস্থানে একটি সামরিক ফরমান জারী করেন যা রেডিও তে প্রচার করা হয়। বলা হয় প্রতিরক্ষা বিভাগে সে সমস্ত বেসামরিক কর্মকর্তা ও সরকারী অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অসহযোগ আন্দোলনের নামে কাজে যোগ দেয়নি তারা ১৫ মার্চের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে বঙ্গবন্ধু এই ফরমানের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন এই ফরমান একটি উস্কানিমূলক এবং অযৌক্তিক। এভাবে ভয় দেখিয়ে বাঙ্গালীদের আর দাবীয়ে রাখা যাবে না। কারন বাঙ্গালীরা এখন একতাবদ্ধ। টিক্কা খানের এই ফরমান জারির পর জনতা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সর্বত্র অসহযোগ আন্দোলন আরো গতিশীল হতে থাকে।

বঙ্গবন্ধু এদিন চার যুবনেতা শেখ মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদের সাথে বৈঠক করেন। এছাড়াও ছাত্রলীগ এবং ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে আন্দোলন কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে আহ্বান করেন।

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যেসব জেলা ও থানায় গঠক করা হয়নি অতি অল্প সময়ের মধ্যে তা গঠন করার আহ্বান জানানো হয়। কেউ যেন পাকিস্তানী সরকারের আদেশ না মানে সেজন্য জনগনের প্রতি এসব সংগঠন সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।

আওয়ামী লীগ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মী ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও করনীয় সম্পর্কে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন ।আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংগ্রাম পরিচালনা ও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তার বার্তা পৌছানো ইত্যাদি সিদ্ধান্ত নির্ধারন করা হয়।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD