৫ মার্চ ১৯৭১ “হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল দেশ”: ধনঞ্জয় দে

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা শুক্রবার, ৫ মার্চ, ২০২১
৫ মার্চ ১৯৭১ “হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল দেশ”: ধনঞ্জয় দে

স্বাধীনতা আন্দোলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন । ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে শুরু থেকেই সারা পুর্ব পাকিস্তানের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ।পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরা বুঝে গিয়েছিল যে মুজিবই এখন বাংলার মুকুটহীন রাজা । সৈন্যদের লাঠিচার্জ,গোলাগুলি উপেক্ষা করে বীর বাঙ্গালীরা চূড়ান্ত সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে থাকে । এর ফলে সামরিক জান্তা কিছুটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে ।এইদিন ঢাকায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় ।

ফলে জনগন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পরিস্থিতির উন্নতির দিকে মনোযোগ দেয় । সৈন্য ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষনায় সামরিক জান্তা স্বীকার করে নেয় যে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানেই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে । এইদিনও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আধাবেলা হরতাল পালিত হয় ।বঙ্গবন্ধু এইদিন ব্যাংকগুলোর প্রতি ১৫০০ টাকার বেশি বেতনগুলোর চেক ভাঙ্গিয়ে লেনদেনের নির্দেশ দেন । ব্যাংক ,সরকারী বেসরকারী অফিসগুলো দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত খোলা রাখার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় ।

এইসময়ে ব্যাঙ্গকগুলোতে বেশ লম্বা লাইন দেখা যায় । ঢাকায় শত শত মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । এইদিনে পুর্ব পাকিস্তান কলেজ শিক্ষক সমিতি ও বিভিন্ন বুদ্ধিজীবি ও পেশাজীবী সংগঠন সার্বিক আন্দোলন সংগ্রামে পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে । সংবাদপত্রের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করায় পুর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন এই আন্দোলনের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে ৬মার্চ তারিখে প্রেসক্লাবে এক সভার ঘোষনা দেন সম্পাদক কামাল লোহানী ।

এইদিনে টঙ্গী শিল্প এলাকায় রফিজুদ্দীন,মতিন,আব্দুল মিয়া ও আলী নামের চারজন সেনাদের গুলিতে নিহত হয় । এছাড়াও চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয় । রাজশাহী ও রংপুরে কারফিউ জারি করা হয় ।এর প্রতিবাদে ঢাকার জনসাধারনের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় । বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের পর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা ও মোনাজাত করা হয় ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয় ।ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ সহ সারা দেশে প্রতিবাদ সভা করা হয়।

এইদিন পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে প্রায় ৫ ঘন্টাব্যাপি গোপনে বৈঠক করে । সাংবাদিকরা এ বৈঠককে ম্যারাথন বৈঠক হিসেবে আখ্যা দেন । এবিষয়ে পার্টির মুখপাত্র হাফিজ পীরজাদা বলেন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড অযৌক্তিক ।

এদিন এক সমাবেশে ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ আগামী ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষন সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রকে আহ্বান জানান ।আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন ঢাকা খুলনা চট্টগ্রাম রাজশাহী রংপুর সহ বিভিন্ন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর গুলিতে অনেক নিরীহ মানুষ ছাত্র কৃষক শ্রমিক নিহত হয়েছে। এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করা ছাড়া কিছুই নয় ।

ছাত্র ইউনিয়নের এক সভায় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন এই স্বাধীকার সংগ্রাম জনতার সংগ্রাম এই সংগ্রামে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত । এখন উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলনকে আরো জোরদার করা।

ন্যাপ প্রধান মাওলানা ভাসানী বলেন দেশে আজ যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাতে সকল দলমত নির্বিশেষে ও সমস্ত সংকীর্নতা ভুলে স্বাধীকার অর্জনের এ আন্দোলনে কাতারবন্দী হতে হবে ।এছাড়াও এদিন স্বাধীকার আন্দোলনের পক্ষে ন্যাপ(ওয়ালী গ্রুপ) এর মোজাফফর আহমদ ,ছাত্র ইউনিয়ন(মতিয়া গ্রুপ) পৃথক সমাবেশ করে । আরো কিছু রাজনৈতিক সংগঠন অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে মিটিং করে । যেন পুরো ৫৬ হাজার বর্গমাইল জনতার উত্তাল তরঙ্গে মেতে ওঠে ।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD