৮ মার্চ ১৯৭১: ধনঞ্জয় দে

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১
১৯৭১

১৯৭১ সালের এ সময়টিতে যতই দিন যাচ্ছিল ততই বাঙ্গালী জনগন আন্দোলন মুখর হয়ে উঠেছিল । জনগন যেন একমন এক প্রাণ হয়ে উঠেছিল আর তাদের মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন একজন । তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দাবী ছিল একটাই । হয় জনগনের ন্যায্য রাজনৈতিক অধিকার নাহয় স্বাধীনতা ।এইদিন ছিল পবিত্র আশুরা । ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকেই মহররমের মিছিল বের হতে থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ মিছিলই জয়বাংলার মিছিলে রূপ নিতে থাকে ।

মিছিলগুলো এসে জড়ো হয় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে । ৭ই মার্চের ভাষনে তারা যেন আরো উদ্দিপ্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনতে চায় । বঙ্গবন্ধু তাদের মাঝে বলেন কামান বন্দুক বেয়নেট দিয়ে আর বাংলার মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না । এদিন সকাল সাড়ে আটটায় ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন রিলে করা হয় । আগের দিন সরাসরি এ ভাষন সম্প্রচার সামরিক সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল ।

এইদিন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বিগত ৭ দিনে যে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে একটি প্রেসনোট প্রকাশ করে ।এতে বলা হয় হাজার হাজার মানুষের নিহত হওয়ার কথাটি মিথ্যা বরং শতাধিক লোক নিহত ও অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে । আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে এই প্রেসনোট কে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অভিহিত করেন ।এর সাথে তিনি আর বিবৃতে হরতাল শিথিলকরনে ১৬ দফা নির্দেশনামা জারী করেন । এটি ছিল দেশের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক নির্দেশাবলীর মত ।একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কথায়ই দেশ চলছে । এইদিন থেকে একমাত্র ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তানি পতাকা দেখা যায় নি ।

এইদিন পুর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভায় সংগঠনের নাম শুধু ছাত্রলীগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । একই সাথে ছাত্রনেতারা একত্রিত হয়ে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন ।ছাত্রলীগের নিউক্লিয়াস খ্যাত চার ছাত্রনেতা নুরে আলম সিদ্দিকী,আসম আবদুর রব,আবদুল কুদ্দুস মাখন ও শাহজাহান সিরাজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনে যে প্রত্যক্ষ কর্মসুচী দেওয়া হয়েছে তার প্রতি পূর্ন সমর্থন জানিয়ে সবাইকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। বিদেশি গনমাধ্যমের অনেক সাংবাদিক এই দিন ঢাকায় এসে পৌছান । কারন মার্চের শুরু থেকেই সারা বিশ্বের নজর এসে পড়ে বাংলাদেশের প্রতি ।

পিডিপির নেতা নুরুল আমিন,মুসলিম লীগের নেতা খান এ সবুর সহ আরো কিছু বিরোধীদলের নেতারা পাকিস্তানের বৃহত্তর স্বার্থরক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানান ।
মুলত ৭ই মার্চের ভাষনের পরই বাঙ্গালী জাতি আস্তে আস্তে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে মানসিকভাবে তৈরি হতে থাকে। এটা সহজেই অনুধাবন করা যাচ্ছিল যে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কোনভাবেই বাঙ্গালীদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না ।বিভিন্নভাবে তারা কালক্ষেপন করছিল বিভিন্ন টালবাহানা করে । তাই বাঙ্গালীরাও এগিয়ে যেতে থাকে চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য ।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD