৯ মার্চ ১৯৭১ :ধনঞ্জয় দে

ধনঞ্জয় দে
দক্ষিণ বাংলা মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১
৯ মার্চ ১৯৭১ :ধনঞ্জয় দে

স্বাধীনতার আন্দোলনের আরেকটি ঐতিহাসিক মুহুর্ত । বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পরে পুর্ব বাংলার পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে ।একে একে বাংলার সব সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী দলগুলো বঙ্গবন্ধুর কর্মসুচীকে সমর্থন জানান। এদিন সর্বত্র হরতাল পালন করা হয় । এইদিন পল্টন ময়দানে ন্যাপ ভাসানী ও জাতীয় লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক জনসভায় মাওলানা ভাসানী বলেন গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই দেশের শাসনতন্ত্র প্রনয়ন করার ক্ষমতা রাখে । জনসভা থেকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানের প্রতি পূর্ন সমর্থন জানিয়ে ও কর্মসূচীগুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সবাইকে আহবান করা হয় ।

আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক প্রেস বিবৃতিতে বেশ কিছু বিষয় যেগুলো জনজীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধায় সেগুলোকে অসহযোগ আন্দোলনের আওতামুক্ত ঘোষনা করেন ।বঙ্গবন্ধুর আহ্বানের জন্য দেশের আইন শৃঙ্গলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে । সরকারী বেসরকারী অফিস আদালত এবং যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক ভাবে চলতে থাকে । জনগনের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকরা এবং সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা রাত জেগে পাহারা দেওয়া শুরু করে । বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের জন্য সর্বত্র কালো পতাকা ওড়ানো হয় । বিক্ষুব্ধ জনতা কালো ব্যাজ ধারন করে । ক্রমেই পুর্ব পাকিস্তানের সর্বক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হয় ।

এদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরী সভায় স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয় ।এই সভার আরেকটি প্রস্তাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কে বাংলাদেশের জাতীয় সরকার গঠনের অনুরোধ করা হয় এবং তার নেতৃত্বে স্বাধীকার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের শপথ নেওয়া হয় ।

এদিন পুর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি বিএ সিদ্দিকী নবনিযুক্ত গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানকে শপথ গ্রহন করাতে অস্বীকৃতি জানান ।এর ফলে সামরিক প্রশাসনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান টিক্কা খানকে পুর্ব বাংলার সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন ।

এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে ন্যাপ(ওয়ালী) জমিয়তে উলামায়ে পাকিস্তান, তেহরিক ই ইশতিকলাল সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল লাহোর, করাচী পেশোয়ার সহ আরো কিছু অঞ্চলে শোভাযাত্রা করে । তারা ভুট্টোর ষড়যন্ত্রের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করার আহ্বান জানান । পাকিস্তানের সরকার পশ্চিমের জনগনকে রাজনৈতিক ভাবে একেবারে অন্ধকারে রেখেছিল । সেখানকার জনগনের মধ্যে গনতান্ত্রিক চর্চা একেবারেই ছিল না ।সেখানকার প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো চেষ্টা করেছিল জনগনকে সচেতন করতে কিন্তু সামরিক জান্তা সর্বক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে ।

আজকের দিনেই চট্টগ্রাম বন্দরের ১৬ নং জেটিতে নোঙর করে অস্ত্রবাহী জাহাজ সোয়াত ।এদিনে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য অনেক বিদেশী নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন ।


আরো নিউজ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD